প্রয়াত হলেন বুদ্ধদেব গুহ (Buddhadeb Guha)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ৩৩ দিন করোনা যুদ্ধে লড়াই করে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি, কিন্তু কোভিড পরবর্তী সমস্যা কেড়ে নিল এই মহাপ্রাণ। ভর্তি ছিলেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই রবিবার রাত সাড়ে ১১ টা নাগাদ প্রয়াত হয়েছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে সাহিত্য জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জন্ম কলকাতায়, ২৯ জুন ১৯৩৬ সাল। পেশায় ছিলেন একজন চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। রাজ্যের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের এবং আকাশবাণী কলকাতা বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু নেশায় ছিলেন একজন সাহিত্যিক। সাহিত্য জগতে নির্মাণ করেছিলেন এক নতুন ভাষা, নতুন চরিত্র এবং নিজস্ব এক জগৎ। তাঁর লেখায় প্রকৃতি, প্রেম, অরণ্যজীবন, ভ্রমণ, শিকার প্রভৃতি বিষয় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে।
প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ 'জঙ্গল মহল'। এরপর একের পর এক উপন্যাস পাঠকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। তাঁর লেখা 'মাধুকরী', 'কোজাগর', 'অববাহিকা', 'বাবলি', 'কোয়েলের কাছে', 'নগ্ন নির্জন', 'একটু উষ্ণতার জন্য', 'বাংরিপোসির দু'রাত্তির', 'বাজা তোরা', 'ঝাঁকিদর্শন', 'রাজা যায়', 'বাতিঘর' প্রভৃতি পাঠক মহলে যথেষ্ট সমাদৃত। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র 'ঋজুদা' প্রায় সকলের কাছেই প্রিয়। অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন সাহিত্যিকের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ শিল্প ও সংস্কৃতির জগৎ। তাঁর মৃত্যু সাহিত্য জগতের অপূরণীয় ক্ষতি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন তিনি। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ, এছাড়া কানাডা, আমেরিকা, জাপান প্রভৃতি দেশেও গিয়েছেন তিনি। আর তাঁর এই দীর্ঘ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। ভারতের বিভিন্ন জঙ্গলে ঘুরেছেন তিনি। জঙ্গল বুদ্ধদেব গুহর হাতের তালুর মধ্যে ছিল। এই দীর্ঘ অরণ্য অভিজ্ঞতা তাঁর লেখাকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বুদ্ধদেব গুহর পার্থক্য এখানেই যে বিভূতিভূষণের কাছে প্রকৃতি ঈশ্বরের অপার মহিমা, কিন্তু বুদ্ধদেব গুহ অরণ্য-প্রকৃতি নারীর প্রতিমূর্তি রূপে প্রতিভাত। তাই বুদ্ধদেব গুহর অরণ্য জীবনে দৈহিক কামনা-বাসনার স্পর্শ রয়েছে, তবে তা উপভোগ্য। এমন মহান সাহিত্যিকের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা শিল্প ও সাহিত্যের জগৎ।