বিতর্কের সূত্রপাত গত বুধবার। সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাসের একটি প্রবন্ধকে ঘিরে। যা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে শুরু হয়েছে ঠাণ্ডা লড়াই। একদল মনে করছেন অজন্তা বিশ্বাস যা লিখেছেন তা পার্টির গনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে। আর একদল ধীরে চলার নীতিতে অজন্তা বিশ্বাসের উত্তর প্রত্যাশায় অপেক্ষারত। সব মিলিয়ে সিপিএমের অন্দরমহলে কান পাতলেই এখন কেবল অনিল-কন্যা অজন্তার নাম।
কী ছিল সেই প্রবন্ধে? কেনই-বা সেই প্রবন্ধ নিয়ে এত বিতর্ক? তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র 'জাগো বাংলা' সংবাদপত্রটি গত ২১ জুলাইয়ের পর থেকে দৈনিক সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে, যদিও বর্তমানে তা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত। গত বুধবার এই 'জাগো বাংলা' পত্রিকায় উত্তর সম্পাদকীয় পত্রে 'বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি' শীর্ষক একটি প্রবন্ধের প্রথম কিস্তি বেরোয়। সেখান থেকেই বিতর্কের শুরু। অনিল-কন্যার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ওঠে একজন সিপিএমের সদস্য তথা কর্মীর অনুচিত হয়েছে এমন প্রবন্ধ লেখা। শোনা যায় নাকি অজন্তা বিশ্বাসকে নাকি বাকি প্রবন্ধ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়, যদিও পরপর চার কিস্তিতে সেই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সেই প্রবন্ধের শেষ কিস্তি প্রকাশিত হয়েছে।
এই প্রবন্ধের শিরোনামেই স্পষ্ট অজন্তা বিশ্বাস কী বলতে চাইছেন। তিনি স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের বঙ্গ রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গ রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করেছেন। যেখানে কংগ্রেস থেকে সিপিএমের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য নারীদের সম্পর্কে বলেছেন। তাহলে বাধ সাধল কোথায়? বাধা তৈরি হয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গ রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখে। অজন্তা বিশ্বাস এক অডিও বার্তায় বলেছেন, (যদিও পরিদর্শক এই অডিও বার্তার সত্যতা যাচাই করেনি) "বঙ্গের রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা নিয়ে লিখতে গেলে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ আসাটাই স্বাভাবিক। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মহিলা নেত্রী হিসেবে বাংলার রাজনীতিতে অসম লড়াইয়ে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। আমার প্রয়াস, দলমত নির্বিশেষে বঙ্গের রাজনীতিতে সব মহিলা নেত্রীর সদর্থক দিকগুলি তুলে ধরা।"
এরপর এই কথার পর তো কোন তর্ক চলতে পারে না। তাহলে এরপরও সমস্যা কোথায়? সমস্যা তৈরি হয়েছে দলের অন্দরমহলে। এই প্রবন্ধ প্রকাশের পরেই আলিমুদ্দিনের তরফে ধীরে চল নীতির কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ সিপিএমের সর্বস্তরের নেতাদের মুখ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। তার জায়গায় অধ্যাপক ও গবেষকদের কমিটি এ বিষয়ে জবাব চাইতে পারে। সেই মোতাবেক গত বৃহস্পতিবার সাত দিনের মধ্যে অজন্তা বিশ্বাসকে এমন প্রবন্ধের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সেখানে এই জবাব দাখিলের যুক্তিতে বলা হয়েছে অজন্তা বিশ্বাস কেবল পার্টির সদস্য নন, একজন কর্মীও বটে। এমনকী পার্টির নতুন সদস্যপদের পুনর্নবীকরণও তিনি করিয়েছেন, তাহলে এমন প্রবন্ধ অর্থাৎ 'মমতা স্তুতি' অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে। যদিও একাংশের দাবি, বিষয়টি একজন গবেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেই তো মিটে যায়। আর বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান এবং বিস্তারকে তো অস্বীকার করার জায়গা নেই।
অজন্তা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নেয় তা সময়ই বলবে। তবে তাঁর অপরাধ কতটা গর্হিত সে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। যদিও সূত্রের খবর, অনিল-কন্যা অজন্তাকে শোকজ করছে সিপিএম। কলকাতা জেলা কমিটির অন্তর্গত যে এরিয়া কমিটিতে তাঁর সদস্যপদ রয়েছে, সেখান থেকে হয়তো অজন্তার কাছে জবাব তলব হতে পারে! সব মিলিয়ে সিপিএমের অন্দরে তৈরি হয়েছে তুমুল উত্তেজনা।