কথায় বলে সর্ষের মধ্যে ভূত, তবে এবার ভৌতিক কান্ড সর্ষের তেলকে ঘিরে। এমনিতেই সরষের তেলের দাম নিয়ে সারাবছর গলদঘর্ম হয় আমজনতা, তায় এবার যদি পকেট খসিয়ে ভেজাল সর্ষের তেল ঘরে ঢোকে তবে? হ্যাঁ, সর্ষের তেলে মিশছে রাসায়নিক পদার্থ। ভোজ্যতেলের রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে গিয়ে মাথায় হাত পুলিশের। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এই ভেজাল সর্ষের তেলে অ্যাসিডের পরিমাণ এতটাই বেশি যা মানুষের সুস্থ শরীরকে ব্যস্ত করতে সমর্থ। কিছুদিন যাবৎ কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের (ইবি) গোয়েন্দারা বাজার ঘুরে ঘুরে ভেজাল সর্ষে এবং ভোজ্য তেলের সন্ধান চালাচ্ছিলেন। তার মধ্যেই উঠে এল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ইবির গোয়েন্দারা তল্লাশি চালিয়ে ছিলেন কলকাতার পোস্তা, জোড়াবাগান এলাকার বিভিন্ন তেলের গোডাউনে। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ভেজাল সর্ষের তেল উদ্ধার হয়েছে। সেই তেল পরীক্ষা করার পর দেখা গিয়েছে যে তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যাসিড রয়েছে। কীভাবে ভেজাল হচ্ছে তেল? জানা গিয়েছে, সর্ষে তেলের মধ্যে অনেকটা তুষের তেল মিশিয়ে ভেজাল করা হচ্ছে। এবং সমস্যা হল, তুষের তেলে অ্যাসিডের পরিমাণ এতটাই বেশী যা মানব শরীরকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে চট করে। গত বছরই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে একটি ভোজ্যতেলে অন্য কোনো তেল মেশানো যাবেন না। যদি মেশানো হয়, সেক্ষেত্রে সেই তেলকে ভেজাল বলা হবে। কারণ এই ধরনের ভোজ্য তেলে অ্যাসিডের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি থাকে।
পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে ভেজাল তেলগুলিতে আয়োডিনের পরিমাণ প্রচুর। যেখানে তেলে অ্যাসিডের পরিমাণ ০.৫ থাকার কথা সেখানে সেই পরিমাণ রয়েছে ১.২৫ । যদি তেল সম্পূর্ণ পরিশোধিত হত তাহলে অ্যাসিডের পরিমাণ কম থাকত অর্থাৎ তেল ভালোভাবে পরিশোধিতও করা হয়নি। যদি এই তেল দিয়ে সরাসরি রান্না করা হয় তাহলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়তে পারে। প্রসঙ্গত, ভেজাল তেলের কারবারের বাড়বাড়ন্তের অন্যতম কারণ হল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে ইতিমধ্যেই ভোজ্যতেলের আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে ঘাটতি দেখা গিয়েছে তৈলভান্ডারে। আর এরই ফায়দা লুটছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যেই কলকাতা বাজারে এই বিষয়ে আরো নজরদারি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সক্রিয়া ভূমিকা পালন করছে পুলিশ, যাতে ভেজাল তেল বিক্রি বন্ধ করা যায়।