আজকাল অনেককেই স্ট্রোকে (stroke) আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ভয়ানক এই রোগ অনেক সময় রোগীর হাঁটাচলা করার ক্ষমতাটুকুও কেড়ে নেয়। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে অচল হয়ে পড়ে অসুস্থ মানুষটির হাত পা। এরপর শুরু হয় ফিজিওথেরাপিস্টের (Physiotherapy) শরণাপন্ন হওয়ার পালা। দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যায়াম করিয়ে ফিজিওথেরাপিস্টরা সুস্থ করে তোলেন রোগীদের। আবার সচল হয় রোগীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হাত-পা।
দীর্ঘ এই প্রক্রিয়ায় অনেক রোগীই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। তাছাড়া এর বিপুল খরচের ভার বহন করাও দুষ্কর। এঁদের জন্য সুখবর এনেছেন আমেরিকার গবেষকরা। তাঁরা তৈরি করেছেন এমন একটি ভিডিও গেম (video game) যার মাধ্যমে সহজে দ্রুত সুস্থ (healthy) হবেন পক্ষাঘাতের রোগী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঁচবে চিকিৎসার খরচও।
সম্প্রতি চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়েছে এই আবিষ্কারের খবর Video game rehabilitation for outpatient stroke (VIGoROUS)। আমেরিকার মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন একটি ভিডিও গেম। গেমটির নাম Recovery Rapids. গবেষকদের একজন জানিয়েছেন, বিশেষ করে গ্রামের রোগীদের পক্ষে অনেকটা পথ পেরিয়ে থেরাপিস্টের চেম্বারে আসা এবং ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে থেরাপি নেওয়া খুবই কষ্টকর। এই মানুষগুলিকে খুব সাহায্য করবে এই ভিডিও গেম। ঘরে বসে গেমটির সাহায্যে পক্ষাঘাতের রোগীরা নিজেরাই প্রয়োজনীয় ব্যয়ামগুলি করতে পারবেন। মাঝে মাঝে থেরাপিস্টের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে নিলেই চলবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, গেমটি তৈরি করা হয়েছে এমন ভাবে যাতে রোগীরা একঘেয়েমি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পান। এই গেমে রোগীদের বসানো হবে একটি কাল্পনিক নৌকায়। সেই ডিঙি নৌকা চলতে থাকবে নদীতে। খেলার অঙ্গ হিসেবে রোগী নানা ভঙ্গীতে দাঁড় টানবেন। কখনও বা মোটরবোট চালানোর মতো করে প্যাডেল করবেন। নদীপথে মাকড়সার জাল কিংবা বাদুড়ের মোকাবিলাও তাঁদের করতে হবে। সবটাই হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। প্রতিদিন এইভাবে খেলা করতে করতেই রোগীর অবশ হয়ে যাওয়া হাত-পায়ে সাড় ফিরে আসবে। আবার তিনি ফিরে যেতে পারবেন তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্মে।
গবেষকদলটি জানিয়েছেন, রোজকার সাধারণ কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের কতখানি কষ্টের মধ্যে ফেলে তা আমরা বুঝি। এই ভিডিও গেমটি বানিয়ে অনেক কম সময়ে ও কম খরচে তাঁদের কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা দারুণ আনন্দিত। প্রসঙ্গত, আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশই আবার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।