তাঁর দাবি এই টীকা একাধারে যেমন নিরাপদ তেমন কার্যকরও বটে। জানা যাচ্ছে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবর মাসে রাশিয়াতে গণ টীকাকরণ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। স্বভাবতই এই তথ্য সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ইমিউনোলজিস্টরা মনে করছেন এই টীকা নিরাপদ এবং কার্যকর হওয়ার সুবাদে কোভিড ১৯ নামক অতিমারী মোকাবিলায় রাশিয়া কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে।
এই টীকা সম্পর্কে কী জানা গিয়েছে?
১৯৫৭ সালে ইউএসএসআর কর্তৃক উৎক্ষেপিত হওয়া প্রথম প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক ১-কে স্মরণ করে এই টীকার নামকরণ করা হয়েছে ‘স্পুটনিক ভি’। মস্কোস্থিত গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি এবং মাইক্রোবায়োলজি কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট গবেষণা কেন্দ্রটি রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অংশ বলে জানা গিয়েছে।
এই টীকা ২১ দিনের ব্যবধানে দুটি পর্যায়ে দেওয়া হবে। দুটি পর্যায়েই টীকাতে মডিফায়েড অ্যাডেনোভাইরাস থাকবে যার প্রভাবে মানববদেহে সর্দিগর্মি হতে পারে।
কোন কোন পরীক্ষায় সাফল্যের মাধ্যমে এই টীকা স্বীকৃতি পেয়েছে?
যে কোনো নতুন টীকা ব্যাপকভাবে ব্যবহারের আগে সাধারণত তিনটি পর্যায়ের পরীক্ষায় সফল হতে হয়।
- প্রথম পর্যায়ে অল্প সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকে। এই পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো ওষুধের সঠিক এবং নিরাপদ পরিমাণ নির্দিষ্ট করা।
- দ্বিতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছা সেবকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দেখা হয় এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রা কতটা এবং এতে কোনো বৈচিত্র্যমূলক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা। যা সবার ক্ষেত্রে একরকম নাও হতে পারে।
- সর্বশেষ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে টীকাকরণ করা হয়। এই টীকা আদৌও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে কিনা তা জানা এই পর্যায়ে টীকাকরণের মূল উদ্দেশ্য।
অনেকক্ষেত্রেই দ্বিতীয় পর্যায়েই অভাবনীয় সাফল্য পাওয়া যায়। গোপন সূত্রে জানা গিয়েছে অগাষ্টের প্রথম সপ্তাহেই প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ বেশ কয়েকটি দেশকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
রাশিয়ার এই পদক্ষেপ কী আদৌ প্রশংসনীয়?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন যা রাশিয়ার, কোভিড ১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন সংক্রান্ত যাবতীয় পদক্ষেপ কে এক মুহূর্তে স্থগিত করে দিতে পারে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো এই টীকা বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদিও অ্যাডেনোভাইরাস সমৃদ্ধ টীকা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই ঝুঁকি যুক্তিসঙ্গতভাবে কম, কিন্তু ট্রায়াল ডাটা না দেখে নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই। এই টীকা করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা প্রদান নাও করতে পারে। যদি মানুষ এটা গ্রহণ করে এবং নিজেকে বিপদমুক্ত বলে বিশ্বাস করে, তাহলে এই ভাইরাস আরো দ্রুত হারে ছড়িয়ে পরবে এবং বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠবে। এছাড়াও সামাজিক এবং রাজনৈতিক ঝুঁকি তো রয়েছেই।
এখনও পরীক্ষাধীন রয়েছে কতগুলি ভ্যাকসিন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে ছয়টি টিকা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় রয়েছে, কিন্তু কোনটিই এখনো সম্পন্ন হয়নি। ১০০টিরও বেশি টীকা পরীক্ষাধীন রয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলি থেকে ইতিবাচক বৈশিষ্ঠ্য দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আগামী ১২ মাসের মধ্যেই এইগুলির মধ্যে থেকে একটি সাফল্যের সাথে প্রকাশিত হবে বলেও জানা গিয়েছে।