সবে মাস্কটা মুখ থেকে খুলছিল! করোনা অতিমারী কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার আরও এক বিপত্তি। বিশ্বজুড়ে দিন দিন তাগড়াই হচ্ছে মাঙ্কিপক্সের থাবা। করোনার পর কি এবার মাঙ্কিপক্সও জীবন নরক করে দেবে? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু, মাঙ্কিপক্স (Monkeypox) ঠেকাতে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সচেতন কেন্দ্র সরকার (Central Government)। বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে মঙ্গলবার মাঙ্কিপক্স ভাইরাস নিয়ে নতুন গাইডলাইন (Guidelines) জারি করল কেন্দ্র সরকার। নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও ব্যক্তির মধ্যে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দেখলে কি কি করতে হবে। উল্লেখিত হয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা কীভাবে করা উচিত। এছাড়াও এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে পর্যাপ্ত সচেতন করতে হবে, জানানো হয়েছে গাইডলাইনে। ইতিমধ্যেই সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এই গাইডলাইন পাঠানো হয়েছে। ভারতে এখনও মাঙ্কিপক্সের কোনো কেস ধরা না পড়লেও অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, ব্রিটেন, আমেরিকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফুলো ফুলো লাল গোটার এই রোগ।
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ
এক্ষেত্রে আক্রান্তরা জ্বরে ভোগেন। তাঁদের দেহে ফোস্কার মতো ফুসকুড়ি দেখা যায়। এছাড়াও গোটা গা-হাত পা, মাথা ব্যথার সমস্যায় ভোগেন তাঁরা। তবে মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত অনেক কম।
মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের উপায়
- অন্যদের থেকে সংক্রামিত রোগীদের আলাদা করুন যারা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকতে পারে।
- মাঙ্কিপক্সের রোগীর সংস্পর্শে থাকা বিছানার মতো কোনো উপকরণের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
- সংক্রামিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার পরে ভাল হাতের স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করুন। উদাহরণস্বরূপ, সাবান এবং জল দিয়ে আপনার হাত ধোয়া বা অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
- রোগীদের যত্ন নেওয়ার সময় মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করুন।
- সমস্ত ক্রাস্ট চলে না যাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মহিলাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানো উচিত। সমস্ত ক্ষত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এবং ত্বকের একটি তাজা স্তর তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতার সতর্কতা অব্যাহত রাখা উচিত।
মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা
স্বাস্থ্যমন্ত্রক তরফে ICMR-NIV পুনে প্রদত্ত ব্যবস্থাপনার নীতি প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছে। নির্দেশিকা অনুসারে, পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) এবং/অথবা সিকোয়েন্সিং দ্বারা ভাইরাল ডিএনএর অনন্য ক্রম সনাক্তকরণের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের কেস নিশ্চিত করতে হবে। এরপর সমস্ত ক্লিনিকাল নমুনা সংশ্লিষ্ট জেলা/রাজ্যের ইন্টিগ্রেটেড ডিজিজ সার্ভিল্যান্স প্রোগ্রাম (IDSP) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ICMR-NIV (পুনে) এর সর্বোচ্চ পরীক্ষাগারে পরিবহন করতে হবে।
ট্রাভেলারদের জন্য পরামর্শ
যেহেতু বিদেশে বেশী পরিমানে মাঙ্কিপক্সের কেস ধরা পড়ছে তাই যারা অহরহ ট্রাভেল করছে তাদের সাবধান হওয়া প্রয়োজন। নিচে গাইডলাইন উল্লেখ করা হল যা বিশেষ করে ট্রাভেলারদের এড়িয়ে চলা উচিৎ:
- ত্বকের ক্ষত বা যৌনাঙ্গে ক্ষতসহ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
- মৃত বা জীবিত বন্য প্রাণী যেমন ইঁদুর (ইঁদুর, কাঠবিড়ালি) এবং অ-মানব প্রাইমেট (বানর, বনমানুষ) সহ ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া।
- বুশমিট মাংস খাওয়া বা প্রস্তুত করা বা আফ্রিকা থেকে বন্য প্রাণী থেকে প্রাপ্ত পণ্য ব্যবহার করা (ক্রিম, লোশন, পাউডার)।
- অসুস্থ ব্যক্তিদের দ্বারা ব্যবহৃত দূষিত উপকরণগুলির সাথে যোগাযোগ (যেমন পোশাক, বিছানা, বা স্বাস্থ্যসেবা সেটিংসে ব্যবহৃত উপকরণ) বা সংক্রামিত প্রাণীর সংস্পর্শে আসা।
এছাড়াও ভ্রমণকারীদের মধ্যে যদি ফুসকুড়ি সহ জ্বরের মতো মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা দেয় তবে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ স্বাস্থ্য সুবিধার সাথে পরামর্শ করা উচিত।