বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে বাসা বাঁধে রোগ। তার কারন হিসাবে বিজ্ঞানীরা দায়ী করেন জম্বি (zombie) কোষেদের। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই কোষগুলি একত্রিত হয়ে আশেপাশের কোষগুলিকে ধ্বংস করতে থাকে। যার ফলে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ধমনী শক্ত (arterial stiffening) হয়ে যাওয়া-সহ নানান বার্ধক্যজনিত রোগের (aging-related disease) সম্মুখীন হন প্রায় সমস্ত মানুষ। তবে এই মারক কোষগুলির হাত থেকে মুক্তি পেতে অবশেষে এক নতুন ধরনের ভ্যাক্সিন (vaccine) তৈরি করলেন জাপানের (Japan) একদল গবেষক।
জাপানের জুন্টেন্ডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টোরু মিনামিনো নেতৃত্বাধীন গবেষকদের এই দল ইঁদুরদের উপর তাঁদের ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা পরীক্ষণ করেছেন। অভাবনীয় ফলও মিলেছে তাঁদের। ভ্যাক্সিনের সহায়তায় ইঁদুরদের দেহে কমেছে জম্বি কোষের সংখ্যা। এই কোষগুলি চিকিৎসক মহলে সেনেসেন্ট কোষ (senescent cell) নামেও পরিচিত।
এবিষয়ে টোরু মিনামিনোর বক্তব্য, ভবিষ্যতে এই ভ্যাক্সিন ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস (diabetes)-সহ একাধিক বার্ধক্যজনিত অসুখ নিরাময়ে প্রয়োগ করা হবে।
তবে কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করলেন বৈজ্ঞানিকের দল? জানা যাচ্ছে, মানুষ এবং ইঁদুরের দেহের সেনেসেন্ট কোষে একধরনের প্রোটিনের (protein) সন্ধান পেয়েছিলেন তাঁরা। এরপর তাঁরা সেই প্রোটিন গঠনকারী অ্যামিনো অ্যাসিডের (amino acid) পাল্টা একটি পেপটাইড ভ্যাক্সিন তৈরি করেন। এই ভ্যাক্সিন শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে যারা সেনেসেন্ট কোষের সাথে নিজেদের যুক্ত করে নেয়। পরবর্তীকালে শ্বেতরক্তকণিকার দ্বারা সেই কোষগুলি ধ্বংস হয়ে যায়।
ভ্যাক্সিন পরীক্ষণের জন্য বিশেষজ্ঞের দল বেছে নেন ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া এবং বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগা কয়েকটি ইঁদুর। তাদের মধ্যে কিছু ইঁদুরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয় এবং বাকিদের আগের অবস্থাতেই রাখা হয়। এরপর গবেষকরা দেখেন ভ্যাক্সিন প্রয়োগের পর টিকাপ্রাপ্ত ইঁদুরগুলির দুর্বলতার অগ্রগতি বাকি ইঁদুরগুলির থেকে যথেষ্ট ধীর। যা দেখে ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হন তাঁরা।
উল্লেখ্য, বর্তমানেও সেনেসেন্ট কোষ সরিয়ে ফেলার জন্য বেশ কিছু ড্রাগ বাজারে উপলব্ধ আছে। সাধারনত সেগুলি অ্যান্টি-ক্যানসার এজেন্ট (anti-cancer agent) হিসাবে ব্যবহার করা হয়। যদিও সেগুলির যথেষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। তবে নতুন এই ভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সংখ্যা খুবই নগন্য। পাশাপাশি এর কার্যকারিতাও যথেষ্ট দীর্ঘমেয়াদী, এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকদের দল। ইঁদুরের উপর সফল পরীক্ষণের পর এবার মানুষের উপর ভ্যাক্সিনের পরীক্ষণের তোড়জোড়ে তাঁরা। আর এতে সফলতা মিললে তা যে বিশ্ব চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ পদক্ষেপ হবে, সে কথা বলাই বাহুল্য।