গণ-অর্থায়নের মাধ্যমে বাংলায় আগে বহুছবি তৈরি হয়েছে এবং দর্শক মহলে জোরালো প্রভাব সৃষ্টি করেছে। তবে এইবার সেই ছবি দুই মূক ও বধিরকে কেন্দ্র করে। প্রতিবন্ধী বলে অনেক সময় তাচ্ছিল্য, ক্ষীণদৃষ্টি, না চাওয়া দয়া ও মায়ার সম্মুখীন হতে হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি দেখা যায়। পরিচালক অশ্রুজিত এরকমই দুই নির্বাক মানুষের সহজ জীবন যাত্রার কাহিনীকে প্রেক্ষাপটে সাজিয়ে সেরে ফেললেন ছবি 'শিমুল পলাশ কথা' -র শ্যুটিং। সম্পূর্ণ ছবিটি মূক ও বধিরদের ইঙ্গিত নির্ভর। তিনিই বাংলায় প্রথম যিনি, এরকম একটি কঠিন বিষয়কে পর্দায় তুলে ধরবার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী এই ছবির যাত্রাপথ খুব সহজ ছিল না।
ওনার কাছে অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাওয়া হলে, উনি স্পষ্ট জানান “এই ছবি সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলেই করা সম্ভব হয়েছে। পাঁচ বছর আগে যখন চেষ্টা করি তখন যথারীতি ফেল করি। প্রথম দিকে নানা মিডিয়া হাউসগুলোতে স্ক্রিপ্ট নিয়ে গেলেও তেমন কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে তারপরে একটি মিলাপ নামের একটি এনজিও সংগঠন এগিয়ে এলেও পুনরায় নিরাশ হই”। প্রতিবন্ধকতা হাজার এলেও আশা ছাড়েন নি পরিচালক। উল্লাসের সুরে বলেন "প্রাক্তন স্কুলের বন্ধুরা এগিয়ে এসে অনেক সাহায্য করার ফলেই হয়ত এই ছবিটা আমরা তৈরি করতে পেরেছি। এত মানুষের সাহায্য ছাড়া হয়ত ছবিটি তৈরি করা যেত না"।
গণ-অর্থায়ন শব্দটির ব্যবহার করার মধ্যে দিয়ে বোঝা যাচ্ছিল ছবিটির উৎসের কথা। ছবির গল্প পরিচালকের স্ত্রীর থেকেই পাওয়া বলে তিনি জানান। নির্বাকদের সাথে থাকতে গিয়ে কি চরম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় পরিচালককে, যা ভাবারও উর্ধ্বে। এমন অত্যাচারের বিবরণ শুনে শিউরে ওঠেন তিনি। সংকল্প করেন, এই নির্বাক মানুষের কথা তাকে সমাজের চোখের সামনে আনতেই হবে। পরিকল্পনা করে নেন আগাম ভাবনার।
এছাড়াও ছবিটির অন্যতম অভিনবত্ব হচ্ছে গোটা ছবিটি একটি আইফোনের ক্যামেরাতে শ্যুট করা। হলিউডে এরকম কাজের উদাহরণ অসংখ্য। সেই সমস্ত ছবিগুলো সুন্দর নজিরও সৃষ্টি করেছে। পরিচালক এবং সিনেমাটোগ্রাফার এইরকম চ্যালেঞ্জের অংশীদার হিসেবে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন। পরিচালক বলেন “ছবিটি শুরু করার আগে চিন্তা হয় কোন কামেরাতে শ্যুট করবো। প্রথমে আমার মাথাতেই বুদ্ধি আসে, আইফোনের ক্যামেরাতে শ্যুট করবার কথা। শুভকে জানাই (সিনেমাটোগ্রাফার) প্রথমে রাজি না হলেও তারপর রাজি হয়ে যায়। চ্যালেঞ্জ নিয়ে মনে হয় ঠিকঠাক উতরে দিয়েছি(হাসি) ..”।
ছবিতে 'পলাশ' নামক চরিত্রে পুষণ দাশগুপ্ত, 'শিমুল' চরিত্রে কৌশানী মুখার্জি এবং 'কথা' চরিত্রে নয়না পালিতকে দেখা যাবে। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে সপ্তর্ষি, কৌশিক, দেবজ্যোতি, অমিত প্রমুখদের দেখা যাবে। ছবিটি এখনই মুক্তি না পেলেও সামনের বছরের শেষের দিকে ওটিটি মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার কথা চলছে। আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালগুলোতে পাঠানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন পরিচালক। ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যে তা সম্পূর্ণ হয় যাবে।