করোনা সময়ে (Covid-19) একের পর এক ভয়াবহ চিত্র সামনে উঠে আসছে। দেশে সার্বিক ভাবে বেড়েছে বেকারত্বের হার, মানুষের মাথা পিছু আয়ের উৎস তলানিতে ঠেকেছে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট বলছে করোনা কালে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে স্কুলছুটের সংখ্যা। যা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন সব মহল। কোভিড পরিস্থিতিতে স্কুলছুটের পাশাপাশি আর একটি সমস্যা সরকার ও প্রশাসনকে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় ফেলেছে। সেটি হল নাবালিকা বিয়ের (Child Marriage) ঘটনা। একদিকে স্কুল বন্ধ এবং অপরদিকে লকডাউনের (Lockdown) সুযোগ নিয়ে চুপিসারে নাবালিকা বিবাহের ঘটনা রাজ্যে আকছার ঘটছে। কিছু কিছু রিপোর্ট এলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বিয়ের কাজ সেরে ফেলছেন অভিভাবকরা।
দুই ২৪ পরগণা, নদিয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর এই সমস্ত জেলায় আগেও নাবালিকা বিয়ের ঘটনা ঘটত। তবে করোনার সময়ে এই লকডাউনের মধ্যে বেশিরভাগ জেলায় এই ঘটনা ঘটছে। দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দুই বর্ধমান, পুরুলিয়া জেলায় গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য হারে নাবালিকা বিয়ের ঘটনা বেড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রশাসনের কাছে খবর আসার আগেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে ফেলছেন অভিভাবকরা। সূত্রে খবর, এই কোভিড কালে বিয়ের ধরণও বদলে গেছে। লকডাউনের জেরে অনুষ্ঠান বিয়ের প্রবণতা কমেছে। তার জায়গায় কন্যা দেখতে এসে পছন্দ হলেই তৎক্ষণাৎ ছাদনাতলায় বাঁধা পড়ছে দু'জন। এক্ষেত্রে মন্দির, বাড়ির তুলসীতলায় বিয়ের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ জানতেই পারছে না। প্রশাসনের কাছে বার্তা পৌঁছানোর আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে আকছার এই বিয়ের ঘটনা।
এর কারণ হিসেবে একদল সমাজবিজ্ঞানী মনে করছেন, করোনার মধ্যে স্কুল বন্ধ। বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। বাঙালি পরিবারের মানসিকতা মেয়েকে ঘরে বসিয়ে না রেখে বিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা গুলো ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এর কারণ হিসেবে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধের দিকে আঙুল তুলেছেন একাংশ। স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের পড়াশোনাও বন্ধ। সব মিলিয়ে পরিবারের লোকজন ঘাড়ের থেকে 'বোঝা' নামাতে কন্যা বিয়ের পথে পা বাড়াচ্ছেন। এক্ষেত্রে একদল মানুষ মনে করছেন তাহলে কি 'রূপশ্রী' প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকার বিষয়টি এখন গৌণ? প্রথম কথা সাধারণ মানুষ মনে করছেন এই ২৫ হাজার টাকা পেতে হলে কন্যার বয়স ১৮ হতে হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় এবং ভালো পাত্রের মোহে অভিভাবকরা নাবালিকা বিবাহে পিছপা হচ্ছেন না।
সমাজের আর এক শ্রেণির শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মনে করছেন, করোনার সময়ে নাবালিকা বিয়ের বিষয়ে প্রচার অভিযান তেমন হচ্ছে না। সরকার ও প্রশাসনের উদাসীনতা পক্ষান্তরে নাবালিকা বিয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী মনে করছেন একাংশ। স্কুল বন্ধ থাকায় নাবালিকারা স্কুলে আসতে পারছে না। স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের কাজ বন্ধ। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে রোজকারের যোগাযোগ বন্ধ। মতের আদানপ্রদান বন্ধ। সব মিলিয়ে গৃহবন্দি জীবনে কন্যার পিতা-মাতারা বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিচ্ছেন অল্প বয়সে। এমন ধারা চলতে থাকলে নাবালিকা বিয়ের ঘটনা কোন দিকে মোড় নেবে, তা রীতিমত আতঙ্কিত সমাজের এক শ্রেণির মানুষ।