গায়ক বলেছিলেন,'এ হৃদয়, দপ্তর পাল্টাচ্ছে না', ঠিকই, কিন্তু আপনার অসাবধানতায় কখন যে আপনার হৃদয়, তথা হৃৎপিণ্ডের অবস্থা ওলোট পালোট হয়ে গিয়ে শোচনীয় হয়ে উঠবে, আপনি টেরটিও পাবেন না। আর আপনারা যারা ইতিমধ্যে 'হার্ট ফেলিওর' (Heart Failure) দ্বারা ভুক্তভোগী, তাঁরা যদি নিয়মিত ব্যায়াম না করা, অত্যধিক লবণ গ্রহণ করা, বা মানসিক চাপে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত না করেন, তাহলে সমস্যা জটিল হবে।
গরমকালে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের ফলে, আপনার হার্ট বিপদসংকুল হয়ে উঠতে পারে। কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীর জলশুণ্য (Dehydration) হয়ে পড়ে। যা একজন হার্টের রোগীর পক্ষে ক্ষতিকারক। হৃদয়ের পাম্পিং ফাংশনটি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেলে, এটি শরীরের বাকি অংশে যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। এটি প্রায়ই বয়ষ্ক ব্যক্তি এবং যারা অনেক বছর ধরে হার্টের অসুখে ভুগছেন, তাদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু আপনি যদি আপনার শরীরের প্রতি যত্নবান হন, সুসংগত জীবন যাপন করতে পারেন, তাহলে যেকোন বিপদ থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন।
ফর্টিস হাসপাতালের (Fortis) কার্ডিওলজিস্ট, ডাক্তার প্রভাকর সি করেগোল (Dr Prabhakar C Koregol) একটি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, 'অত্যধিক তাপের প্রভাব ছাড়াও এমন অনেক অন্য কারণও রয়েছে, যা হার্টের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেমন অত্যধিক পরিমাণে কাঁচা লবণ গ্রহণ, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান, ধুম্রপান, দুর্বল রক্ত সঞ্চালন এবং স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন। এর মধ্যে একটির প্রবণতা থাকলেও আপনার শরীর খারাপ স্বাস্থের অধিকারী হবে।' তিনি আরো যোগ করে বলেন যে, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার অতিরিক্ত বৃদ্ধির জন্য, রক্ত সঞ্চালনও দ্রুত হারে বেড়ে যায়, এর ফলে হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত গতিতে স্পন্দিত হয় এবং প্রতি মিনিটে দ্বিগুণ রক্ত সঞ্চালন করে। 'তীব্র তাপ এবং ক্রমাগত ঘর্ম নিঃসরণ শরীরের তরল উপাদানকে অপসারণ করে কমিয়ে দেয়, যার ফলে শরীর জনশূন্য হয়ে ওঠে এবং এর ফলে হৃৎপিন্ডে চাপ পড়ে, এবং হার্ট ফেলিওরের দিকে চালিত হয়!'
তীব্র গরমের হাত থেকে, হৃদরোগীদের সুস্থ থাকার পরামর্শ:
১) গরম আবহাওয়ায় শারীরিক কার্যকলাপ যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন, এমনকি ঘর-বারান্দা করারও বেশি প্রয়োজন নেই
২) অ্যালকোহল বর্জন করুন
৩) এই গরমে হালকা রংয়ের এবং সুতির জামা পরাই শ্রেয়
৪) হাওয়াপ্রবন জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন
৫) নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন
৬) রক্তচাপে অসামঞ্জস্য দেখা দিলে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন তৎক্ষণাৎ
৭) লক্ষণ গুলির উপর নির্ভর করে রক্তের সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন
৮) হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা এবং উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাসসহ বয়স্ক রোগীদের ওষুধের ডোজ কমাতে হবে হার্ট ফেলিওরের ইতিহাস সহ রোগী যারা খুব কম জল পান করেন, তাদের জল খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করা উচিত (২৫০-৫০০মিলি/দিনে) এবং তাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরে তাদের লবণ খাওয়ার সামঞ্জস্য করা উচিত।