করোনার ত্রাসে গোটা দেশ। গতবছরের তুলনায় এ বছরে করোনাক্রান্তের গ্রাফ অনেকটাই ঊর্ধ্বমুখী, তবুও অসচেতনতার ছোঁয়া সরকার এবং সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেরই মধ্যে। এর মাঝেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দৈনিক সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন নজির তৈরি হল রাজধানী দিল্লিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লীতে মারা গিয়েছেন ৩৪৮ জন। সব মিলিয়ে দিল্লিতে এখনও অবধি মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৫৪১ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৩৩১ জন। এই মুহুর্তে রাজধানীতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৯২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এদিকে মিলছে না বেড, নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার। কোভিড ওয়ার্ডে এক বিছানায় একাধিক জনকে রাখা হয়েছে, এমন ছবিও সামনে এসেছে।
ইতিমধ্যে সোশ্যাল মাধ্যমে একটি ভিডিও সামনে এসেছে, যা মুহুর্তের ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ারও আর্জি জানিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, এই ভিডিওটি গতকাল বৈঠকের। যেখানে শোনা যাচ্ছে, কেজরিওয়াল বলছেন, তাঁর কাছে প্রতি মুহূর্তে হাসপাতাল থেকে ফোন আসছে। যেখানে বলা হচ্ছে, কোনো হাসপাতালে ২ ঘন্টার জন্য অক্সিজেন চলবে, কোথাও আবার আর ঘন্টা। অথচ অক্সিজেন সরবরাহের গাড়ির খোঁজ করতে গিয়ে কেজরিওয়াল শোনেন, অন্য রাজ্য তাঁদের গাড়ি আটকে রেখেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর কাতর আর্তি, এ ব্যাপারে নজর দিতে। নয়তো দিল্লির দুই কোটি মানুষকে মরতে হবে। যদিও এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর থেকে এই সদুত্তর মেলেনি। এমনটাই শোনা গিয়েছে এই ভিডিওতে (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পরিদর্শক)।
এর মাঝেই আজ করোনাক্রান্তদের বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হলেন দিল্লির মুলচন্দ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো ‘এসওএস’ বার্তায় বলা হয়, "আমাদের কাছে ২ ঘণ্টারও কম অক্সিজেন রয়েছে। হাসপাতালে কোভিড রোগীর সংখ্যা ১৩৫ জন। তাঁদের অনেকেই লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে। আমরা মরিয়া হয়ে সমস্ত নোডাল অফিসারদের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।" প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজল এবং মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও এই একই বার্তা দিয়েছেন মুলচন্দ হাসপাতাল। তাঁদের বক্তব্য, "আমাদের কাছে মাত্র আধ ঘণ্টার অক্সিজেন রয়েছে। জানি না, পরিস্থিতির অবনতি হলে কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে।"
গতকালও একই ভাবে অক্সিজেনের আর্জি জানিয়েছিল দিল্লির একাধিক হাসপাতাল। তাই শুক্রবার দিল্লি হাইকোর্টে শুনানির সময় কেজরিওয়াল সরকার জানিয়েছিল, 'রাজধানীর অন্তত ৬টি হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট চলছে।' আর কথার পরিপ্রেক্ষিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্টের বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি এবং বিচারপতি রেখা পাল্লির বেঞ্চ বলেন, ‘আমরা সকলেই জানি, এই দেশ চালাচ্ছেন ভগবান’।