বঙ্গোপসাগরে হওয়া নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে বিগত প্রায় একসপ্তাহ ধরে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রবল বর্ষণে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলীর বহু অঞ্চল জলের তলায়। তবে ঝাড়খণ্ডের দিকে নিম্নচাপ সরে যাওয়ায় গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি মাত্রাছাড়া বৃষ্টির একঘেয়েমি থেকে আপাতত মুক্তি পেলেও পশ্চিমের জেলাগুলির জন্য আশঙ্কা জারি রেখে আবহাওয়া দপ্তরের ঘোষণা, বৃহস্পতিবারও প্রবল বৃষ্টি চলবে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমানে। তার উপর দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ায় বর্ধমান, হাওড়া, হুগলীর নিচু অংশের বাসিন্দাদের জন্য পরিস্থিতি এখন, ‘একে রাম রক্ষা নেই, সুগ্রীব সহায়’।
আগের বৃষ্টির জল এখনও শুকায়নি বহু অঞ্চলে। তার উপর গত দুদিনের লাগামছাড়া বৃষ্টি, সর্বোপরি দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ১,৫০,০০০ কিউসেক জল ছাড়া, এককথায় দিশেহারা হাওড়া, হুগলী, বর্ধমানের জেলাবাসীরা। এর মাঝেই তাঁদের চিন্তা আরও কয়েনগুণ বাড়িয়ে সেচ দপ্তরের ঘোষণা, ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার পরিমান আরও বাড়বে।
এবারে বৃষ্টিপাতে রেকর্ড করল পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া জেলা। সেচ দপ্তরের আধিকারিক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কেবল আসানসোলেই হয়েছে ৩৮৫ মিলিমিটার। যা ভেঙেছে বিগত ৭০ বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। সেখানকার রেলপাড়, দিলদারনগর, নিয়ামতপুর, চেলি ডাঙা, রানিগঞ্জ, বার্নপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা সম্পূর্ণ জলমঙ্গ। শিল্পাঞ্চলের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা নুনিয়া এবং গাড়ুই নদীও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বেড়ে যাওয়া নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা, তেমনটাই জানাচ্ছে প্রশাসন।
পাশাপাশি পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে বৃষ্টিপাতের পরিমান ২২০ মিলিমিটার। পুরুলিয়া, বাঁকুড়াও এবার সম্মুখীন রেকর্ড বৃষ্টির। পুরুলিয়াতে ১৭৫ মিলিমিটার, বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে রেকর্ড ৩৭১ মিলিমিটার, কাঁটাবাঁধে ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে এই ক’দিনে। জেলাগুলির উপর দিয়ে বয়ে চলা দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, গন্ধেশ্বরী নদীর জলও বইছে বিপদসীমার উপরে। গন্ধেশ্বরীর জলে ইতিমধ্যেই প্লাবিত বাঁকুড়া শহরের বিস্তীর্ণ অংশ। জলের তোড়ে ডুবেছে দ্বারকেশ্বর এবং শিলাবতী নদীর উপর একাধিক সেতুও। জেলা জুড়ে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।
উল্লেখ্য, নিম্নচাপের কারনে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে লাগাতার বৃষ্টি শুরু হয় বাঁকুড়া জেলা জুড়ে। বুধবার তীব্রতা বাড়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমান। যার জেরে বুধবার বিকালেই অধিকাংশ নদীর জলস্তর বিপদ সীমা টপকে যায়। ডুবে যায় একাধিক সেতু। সিমলাপালের কাছে শিলাবতী নদীর উপর সেতু ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে। শিলাবতীর জলে ডুবে যায় ভেলাইডিহা সেতুও। গন্ধেশ্বরীর জলও নদীর পাড় ছাপিয়ে ঢুকে পরে লোকালয়ে। ডুবে যায় বাঁকুড়া বাইপাস এবং তার সংলগ্ন লক্ষ্যাতাড়া এবং সতীঘাট এলাকা। জল ঢোকে পলাশতলা, রামকৃষ্ণপল্লী, অরবিন্দপল্লী-সহ বিভিন্ন এলাকায়।
যদিও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাস্তায় নামেন জেলা প্রশাসন এবং বাঁকুড়া পৌরসভার আধিকারিকেরা। এবিষয়ে বাঁকুড়ার মহকুমাশাসক সুশান্তকুমার ভক্ত জানিয়েছেন, যে এলাকাগুলিতে জল ঢুকেছে, সেই এলাকাগুলি তাঁদের নজরে রয়েছে। প্রশাসন সব দিক থেকে প্রস্তুত বলেই আশ্বাস সুশান্তবাবুর।