পিএম কিষান (PM Kisan) প্রকল্পের আওতায় কয়েক লক্ষ বাংলার কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন বলে সোমবার অভিযোগ তুললেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (Sobhandeb Chattopadhyay)। তিনি স্পষ্ট অভিযোগ এনেছেন, রাজ্যের তরফে ৪৬.০২ লক্ষ কৃষকের নাম পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে কেন্দ্র সরকার ৩৮.৫১ লক্ষ কৃষকের নামে টাকা পাওয়ার শিলমোহর দেয়। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ২৩.৭৭ লক্ষ উপভোক্তা এই সাহায্য পেয়েছেন। তাহলে বাকি ১৫ লক্ষের বেশি কৃষক এই সুবিধা থেকে কেন বঞ্চিত হচ্ছেন এ দাবি তুলেছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রের তরফে বারবার অভিযোগ করা হয়েছিল পিএম কিষান প্রকল্পে রাজ্যের তরফে কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় বাংলার কয়েক লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকী একুশের নির্বাচনে বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা কথায় কথায় ক্ষমতায় এলেই বকেয়া ১৮ হাজার টাকা কৃষকের হাতে পৌঁছে দেবেন। বাস্তবে কৃষকদের যাবতীয় তথ্য পোর্টালে আপলোড করার পরও কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে এদিন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন।
সোমবার কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সব রাজ্যের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। উত্তরপ্রদেশের তরফে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বৈঠকে থাকলেও বাকি সব রাজ্যের পক্ষে আলোচনায় যোগ দেন কৃষিমন্ত্রী বা কৃষিসচিবেরাই। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং কৃষিসচিব ওঙ্কার সিংহ মিনা। বৈঠকে রাজ্যের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পিএম কিসানে যথাযথ ভাবে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ কৃষকের অ্যাকাউন্টে টাকা আসছে না। এ বিষয়ে কেন্দ্রের তরফে সাফাই, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য এবং আধার কার্ডের তথ্য সময়মতো না পাওয়ায় এই সমস্যা। যদিও রাজ্যের তরফে স্পষ্ট দাবি, সব যাচাই করেই কৃষকদের তথ্য পাঠানো হয়েছিল, যদিও কেন্দ্রের গড়িমসিতে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
অন্যদিকে এদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কিষান নিধি, কিষান ক্রেডিট কার্ড, কৃষকদের ডেটাবেস তৈরি করা, ডাল ও ভোজ্যতেলে স্বনির্ভরতা-সহ বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এখানেই শেষ নয়, কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলার কৃষি উন্নতির তথ্য তুলে ধরেছেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে কৃষি উৎপাদনের হার ২০১৭–১৮ সালে ছিল ১৭৭ শতাংশ। সেখানে ২০১৯–২০-এ বেড়ে হয়েছে ১৯০ শতাংশ। কৃষি ক্ষেত্রে বাজেট ২০১০–১১ সালে ১৮০.৭০ কোটি টাকা ছিল। ২০২০-২০২১ আর্থিক বছরে বেড়ে ৫৮৬০ কোটি টাকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। খাদ্যশস্য ২০১০–১১ সালে ১৪৮.১ লক্ষ মেট্রিক টনের তুলনায় ২০১৯–২০ সালে হয়েছে ২ লক্ষ মেট্রিক টন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৬৬ লক্ষের বেশি কৃষক বিভিন্ন প্রকল্পে সুবিধা পেয়েছেন। আর সরকার কৃষক বন্ধু প্রকল্পে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দ্বিগুণ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।