তখন সন্ধ্যা হয় হয়। থানার সামনে ঘুর ঘুর করছিল একটি বছর পনেরোর মেয়ে। চোখে-মুখে ভয় আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। চোখ এড়ায়নি কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীর। কাছে গিয়ে খোঁজ নিতেই রোমহর্ষক কাহিনি। বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন। সে এখন বিয়ে করতে রাজিই নয়। উপায়ান্তর না পেয়ে থানার বড়বাবুর দ্বারস্থ হয়েছে মেয়ে।
ঘটনাটি বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের থানা এলাকার। স্থানীয় হাটকৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা পিয়ালি (নাম পরিবর্তিত)। বর্তমানে দশম শ্রেণির ছাত্রী। দুই বোন, বাবা-মায়ের অভাবের সংসার। মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলেই 'দায়' মুক্তি। বয়স না হলেও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চোরাগোপ্তা এমন বিয়ের ঘটনা চলছেই। তবে এ কন্যাশ্রী সাহসিনী। বাবা-মায়ের চোখে ধুলো দিয়ে সটান হাজির থানায়। এমন সাহসকে তো কুর্নিশ জানাতেই হয়।
কিশোরীর অভিযোগ পেয়ে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ প্রশাসনের। পিয়ালিকে নিয়ে তাদের বাড়ি হাজির স্বয়ং থানার বড়বাবু এবং এলাকার বিডিও। বাড়ির লোকজনদের বুঝিয়ে বিয়ে থেকে রেহাই পেল পিয়ালি। হয়তো সাহস দেখিয়ে থানায় হাজির হয়েছিল বলেই পিয়ালি রক্ষে পেল। পিয়ালি বড় হয়ে বিডিও হতে চায়। মানুষের সমস্যার পাশে সরাসরি দাঁড়াতে চায়।
রাজ্য সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প কন্যাশ্রী। কন্যাশ্রী জিতে নিয়েছে আন্তর্জাতিক খেতাব। তারপরও ১৮ বছরের কম বয়সী নাবালিকাদের বিয়ে আটকানো যাচ্ছে কী, এই প্রশ্ন তুলেছেন একাংশ। এরকম কত পিয়ালিই তো হারিয়ে যাচ্ছে। সংসারে অভাবের টানে কত বাবা-মা বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে পিয়ালির এই সাহসকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনদের একাংশ। সঙ্গে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।