একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ধাপে ধাপে সরিয়ে ফেলা হয়েছে ১৮ কোটিরও বেশি টাকা। এই ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং জানা যাচ্ছে পুলিশের হাত থেকে এই ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। সম্প্রতি এই ঘটনার তদন্ত করার জন্য একটি দল দিল্লি পৌঁছেছে। তাদের অনুমান, এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ঝাড়খণ্ডের কুখ্যাত জামতারা গ্যাং। আপনারা যারা জামতারা গ্যাং এর ব্যাপারে জানেন, তারা অবশ্যই জানেন জামতারা হচ্ছে এমন একটি কুখ্যাত গ্রুপ যারা সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নেয় তাকে না জানতে দিয়েই।
ঘটনাটি ঘটেছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঘাটালের স্থানীয় শাখায়। ওই শাখার ব্যাঙ্ক ম্যানেজার গৌতম দত্ত, শাখার কর্মী শ্রীমন্ত দাস এবং রাজিব বক্সী নামে একজন ব্যক্তি এই ঘটনায় জড়িত বলে মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই পুরো ঘটনার পিছনে মূল চক্রী এই রাজিব। রাজিব নাকি বেশ কিছুদিন ধরে হুগলির আরামবাগে থাকতে শুরু করেছিলেন। তার আদি বাড়ি ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে। অন্যদিকে, গৌতম দত্তের বাড়ি রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় এবং শ্রীমন্তের বাড়ি ঘাটালের সুলতানপুরে। এই ঘটনায় প্রথমে শ্রীমন্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারপরে তাকে জেরা করে একে একে রাজিব এবং গৌতমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, রাজিব প্রথমে নিজেকে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় নামে পরিচয় দিয়েছিল। তবে পুলিশ পরবর্তীকালে তদন্ত করে জানতে পারে, আসলে ঐ ব্যক্তির নাম গৌতম নয় বরং রাজিব। সম্প্রতি এই ঘটনার পুরো তদন্তভার গ্রহণ করেছে সিআইডি। রাজিব ওই শাখার লোকেদের কাছে দাবি করেছিলেন তিনি নাকি সাইবার ক্রাইম অফিসার এবং তাদের কাছে কিছু অভিযোগ রয়েছে, এই শাখায় সাইবারক্রাইম জালিয়াতি হয়েছে। তিনি ভুয়ো অফিসার হিসেবে সেখানে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তদন্তের অছিলায় এই ব্যাংকের একাধিক অ্যাকাউন্টের টাকা অন্য কিছু অ্যাকাউন্টে নিয়ে চলে যান রাজিব। জানা যায়, ব্যাঙ্ক ম্যানেজার নিজেই নাকি সেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তারপরেই এপ্রিল ভাষায় ঘাটাল থানায় এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সেই ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজার। জানা গিয়েছে, এক বছরের মধ্যেই দফায় দফায় ১৮ কোটিরও বেশি টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে সেই ব্যাংক থেকে। যে শাখায় ওই নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল সেটি দিল্লিতে। জুলাইয়ে এই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেছিল সিআইডি। সেই সময় এই মামলার একটি চার্জশিট পেশ করা হয়। সেই সময় সিআইডির তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, এই ঘটনায় দুর্নীতি দমন আইন যুক্ত করে নতুন চার্জশিট পেশ করতে পারে সিআইডি। জানা গিয়েছে, টাকা সরানোর ভাউচারে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার নিজেই সই করেছেন। ম্যানেজারের পাসপোর্ট খতিয়ে দেখে সিআইডি জানতে পেরেছে, তিনি এর আগে বেশ কয়েকবার বিদেশ ভ্রমণও করেছেন। যদিও, এই ব্যাংকের ম্যানেজার দাবি করছেন তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এবং সম্পূর্ণরূপে সাদা টাকায় তিনি ভ্রমণ করেছেন।
সিআইডির একাংশ মনে করছেন, "এই ঘটনার পিছনে কোন না কোন একটি গ্যাং রয়েছে। সম্ভাবনা রয়েছে এই পুরো ঘটনার পিছনে রয়েছে জামতারা গ্যাং।" এই ঘটনার তদন্ত করার জন্য সিআইডির একটি দল সম্প্রতি দিল্লি গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। গ্রাহকদের অজান্তেই তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নেওয়া হয়েছে। অন্য জেলায় এরকম নজির রয়েছে, এবং এই ঘটনার তদন্ত আগেও করেছে সিআইডি। সমস্ত ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, এইসব করতে কিছু এসএমএস অ্যালার্ট চেঞ্জ করতে হতো। আর এরকম সাইবার হ্যাকিং করতে সিদ্ধহস্ত জামতারা গ্যাংটি।এমন কয়েকটি ঘটনায় ঝাড়খণ্ডের কুখ্যাত গ্যাং জামতারা আগেও জড়িত ছিল। এই কারণেই তদন্তকারীদের অনেকের মত, এই ঘটনার সঙ্গে জামতারা গ্যাং জড়িত থাকতে পারে। সেই তদন্তেই বর্তমানে দিল্লি গিয়েছে সিআইডি।