বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরবঙ্গে ঘটে গেল একটি মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা। পাটনা থেকে গুয়াহাটিগামী ১৫৩৬৬ আপ বিকানের এক্সপ্রেস ময়নাগুড়ির কাছে দোমহনী এলাকায় লাইনচ্যুত হয়েছে বলে খবর। এই ট্রেনের বেশ কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে উলটে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এই ঘটনায় বহু হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। ট্রেনের কামরা একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে বলে খবর। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যেখানে ট্রেন মাত্র ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে চলছিল সেখানে কি কারণে এরকম ভাবে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল সেই নিয়ে।
স্থানীয় আরপিএফ এলাকায় পৌঁছে উদ্ধারকার্য শুরু করেছেন। এছাড়াও বিশেষ ট্রেন ও উদ্ধার কার্যে জন্য পাঠানো হয়েছে। ডিআরএম এবং উচ্চপদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং উদ্ধারকার্য খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন। প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে রেল পুলিশের তরফ থেকে।যাত্রী বোঝাই চারটি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে বলে খবর। তাই এই ঘটনায় পরিস্থিতি ক্রমশ আশঙ্কাজনক হচ্ছে বলে জানাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। একটির ওপর অন্য একটি কামরা উঠে গিয়েছে, এর ফলে প্রায় ভগ্নদশা কয়েকটি কামরার। এর তলায় চাপা পড়ে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছে রেল।
ইতিমধ্যে স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে আহতদের পাঠানোর ব্যবস্থা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী তিন জনের মৃত্যু হয়েছে এই ঘটনায়। অন্ততপক্ষে কুড়ি জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিশাল বাহিনী পৌঁছেছে এলাকায়। কামরা গুলির এত খারাপ অবস্থা, যে উদ্ধারকার্য করতে বেগ পেতে হচ্ছে রেল কর্মীদের। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই আলো ব্যবস্থা করে উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়েছে। গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে বার করা হয়েছে কামরা, বেশ কয়েকজন যাত্রীকে বের করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন। ট্রেনের আশেপাশে একাধিক যাত্রীদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। প্রায় সকলেই কম বেশি আহত হয়েছেন। ইঞ্জিন এর পর থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ টি কামরা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত।
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের ৩০ টি অ্যাম্বুলেন্স ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সর্বমোট ৫১টি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ কে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে আরো খারাপ হতে পারে। একদিকে যখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে হাসপাতালের বেহাল অবস্থা, তখনই এরকম একটি দুর্ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে ডাক্তারদের মধ্যে। চিকিৎসক এবং নার্সদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। ইতিমধ্যেই রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এই ঘটনার তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময় দুর্ঘটনার খবর পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি বৈঠক চলাকালীন সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পদস্থ কর্তাদের ঘটনাস্থলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের পক্ষ থেকে একটি হেল্পলাইন নম্বর জারি করা হয়েছে। সেই হেল্পলাইন নম্বর হল ৮১৩৪০৫৪৯৯।