কখনও মিড ডে মিলের কর্মীদের টিকাকরণ, কখনও প্রবল বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে নিজেই ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন, কখনও নিজ উদ্যোগে গর্ভবতী মহিলাদের টিকাকরণের উদ্দেশ্যে চলছে 'ভ্যাকসিন রথ', আবার কখনও 'চলো বই পড়ি, গল্প তুলি' স্লোগান নিয়ে চলছে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। মানুষের কাছে তাঁর পরিচয় 'রাস্তার মাস্টার'।
বর্ধমানের জামুড়িয়া তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়েক। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি 'রাস্তার মাস্টার' নামে পরিচিত। কোভিড আবহে বন্ধ স্কুলের পঠনপাঠন। কিন্তু দীপ নারায়ণ নায়েক নিজ প্রচেষ্টায় রাস্তায় খুলেছেন অভিনব পাঠশালা। খুদে পড়ুয়াদের হাতে নেই বই, খাতা, স্লেট! আর যাদের 'নুন আনতে পান্তা ফুরোয়' অবস্থা, তাদের বই-কলম জুটবে কীভাবে! কিন্তু পড়া থামালে তো চলছেই না। তিনি বেছে নিয়েছেন এক অভিনব পন্থা। বাড়ির মাটির দেওয়ালই এখন ব্ল্যাক বোর্ড। তাতেই লেখা রয়েছে পড়াশোনার খুঁটিনাটি। খুদে বাচ্চাদের তিনি প্রকৃতির কোলে পাঠ দিচ্ছেন একের পর এক বিষয়।
জামুড়িয়ায় পৌঁছালেই দেখতে পাবেন এমন একের পর এক মাটির দেওয়াল। কোনোটায় স্বর বা ব্যঞ্জনবর্ণের সারিবদ্ধ চিত্রায়ণ, আবার কোনোটায় নামতার আঁকিবুকি। শুধু পড়ুয়া নয়, রাস্তার সাধারণ নিরক্ষর মানুষ থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের বাবা-মায়েরাও শিখে নিচ্ছেন এমন পাঠ। জামুড়িয়ার জবা গ্রামে গেলেই চোখে পড়বে এমন সুদশ্য মাটির দেওয়াল। শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়েক পড়ুয়াদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন মাইক্রোস্কোপ। পড়ুয়ারা নিজেরাই দেখে নিচ্ছে ম্যালেরিয়া কোন দৈব ঘটনা নয়, জীবাণুঘটিত রোগ। 'ভূতে ধরা' কিংবা ওঝার বুজরুকি নয়, চলছে বিজ্ঞানচর্চার আসর।
সাধারণ মানুষ থেকে এলাকার বিধায়ক শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়েকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং নিজের ফেসবুক ওয়ালে তুলে ধরেছেন শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়কের কৃতিত্বের কথা। আর খুদেদের তো কথাই নেই! শুরু হয়েছিল ২ জন পড়ুয়া দিয়ে, আর এখন 'দুয়ারে স্কুল'-এ পড়ুয়ার সংখ্যা শতাধিক। 'শিক্ষক দিবস'-এ শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়েকের এমন কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।