"অভিনন্দন? ধরতে পারলে তোর হৃদস্পন্দন বার করে দেবো হতচ্ছাড়া", মনে পড়ছে দৃশ্য? হ্যাঁ, ঠিক। কেল্টুকেই ধরার কথা হচ্ছে আর তাকেই ধাওয়া করছেন সুপারিনটেনডেন্ট স্যার। আমার আপনার সহ আপামোর বাঙালির ছোটবেলার প্রিয় নন্টে-ফন্টে, হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল-দি-গ্রেট কমিক বইগুলো থেকে পাওয়া সেই নির্ভেজাল কৈশোরের হাস্যরস আজ জাতীয় মঞ্চে বিশেষ সন্মানে স্বীকৃত হল। স্রষ্ঠা নারায়ণ দেবনাথ নির্বাচিত হয়েছেন এবছরের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক প্রকাশিত পদ্মশ্রী প্রাপকের তালিকায়।
বার্ষিক মাত্র দু'টাকা ও চারটি ছোট চকলেটের বিনিময়ে তিনশো ছাত্রছাত্রীকে নিজের বাড়িতে পড়ান বর্ধমানের ৭৮ বছরের শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়। নজিরবিহীন এই মানবদরদী কাজের জন্য শুধু পদ্মশ্রীর মঞ্চে জায়গা করে নেবেন 'সদাই ফকিরের পাঠশালা'-র মাষ্টারমশাই। প্রায় চল্লিশ বছর রামনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পর এই অবসর জীবনে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের সম্বল হয়েছেন মাষ্টারমশাই। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সহ স্নাতক স্তরেও পড়ান তিঁনি।
বাংলার ক্রীড়াজগতের অন্যতম বিখ্যাত টেবিল টেনিস খেলোয়াড় মৌমা দাস স্থান পেলেন পদ্মশ্রীর তালিকায়। ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রথম টিটিতে যোগদান, ২০০৪ ও ২০০৮ সালে সালের অলিম্পিকে যোগ দিয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৩তে জিতে নেন অর্জুন পুরস্কার। সদ্য মাতৃত্বে স্বাদ পাওয়া মৌমা তার এই সন্মান নিজের ছোট্ট মেয়েকে উৎসর্গ করতে চান।
কামতাপুরি ভাষার প্রসারে বিশেষ অবদান রাখেন ধর্মনারায়ণ বর্মা। কোচবিহারের তুফানগঞ্জের প্রাক্তন সংস্কৃতের শিক্ষক ধর্মনারায়ণবাবু কামতাপুরি ভাষার ইতিহাস সংক্রান্ত গবেষণা ও এই ভাষায় ব্যকরণ রচনা করেন। বেশ ক'টি প্রকাশনীর দায়িত্বও সামলান তিনি। পদ্মশ্রী পাবেন তিনিও।
বীরেন বসাক, যিনি একসময় কলকাতার ফুটপাথে শাড়ি বিক্রি করতেন, আজ তিনি বার্ষিক ২৫ কোটি টাকার উৎপাদন সহায়ক একটি তাঁতবস্ত্র কোম্পানির মালিক। শিল্প বিভাগে পদ্মশ্রী পাবেন শান্তিপুরের এই তাঁত শিল্পী বীরেন বসাক। পাঁচ হাজার তাঁতি তার সংস্থায় কর্মরত যার মধ্যে ২,০০০ জন মহিলা। চিরাচরিত জামদানি শাড়ির অভিনবত্ব এনে রীতিমতো নজির গড়েছেন বীরেনবাবু।
এছাড়াও সাহিত্য বিভাগে জগদীশচন্দ্র হালদার ও সমাজসেবার গুরুত্বপূর্ণ নজির গড়ার জন্য পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত হবেন আদিবাসী সমাজের গুরুমা কমলি সোরেন। এবছর পদ্মভূষণ দেওয়া হবে ১০ জনকে। পদ্মশ্রীর তালিকায় রয়েছেন ১০২ জন। তবে এ বছর বাংলার থেকে পদ্মবিভূষণ বা পদ্মভূষণ না এলেও পদ্মশ্রী পাবেন মোট ৭জন।