একবিংশ শতকেও সমাজে আকছার ঘটে নারীদের প্রতি নির্যাতন। কন্যা সন্তান হলেই অনেক পরিবারে নির্যাতনের শিকার হন মায়েরা। যেন কন্যা সন্তান সমাজের 'অভিশাপ'। অথচ এই পৃথিবীর মূল ধারক ও বাহক যে এই কন্যা সন্তানই একথা ভুলে যান পুরুষশাসিত সমাজ। এবার নিজের কন্যা সন্তানকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করে নজির গড়লেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের শ্যামনগরের এক দম্পতি। রীতিমতো পুরোহিত ডেকে নিজের বছর দশেকের কন্যাকে লাল বেনারসিতে সাজিয়ে মাথায় মুকুট পরিয়ে পুজো সারলেন তাঁরা। লক্ষ্মীপুজোর দিনে এক অনন্য নজির গড়লেন পঞ্চায়েত অফিসের সরকারি এক্সিকিউটিভ এই দম্পতি।
কন্যারাই ঘরের লক্ষ্মী। ঘরে কন্যা সন্তান থাকলে এরচেয়ে বড় সম্পদ আর কীই-বা হতে পারে! সমাজের কাছে যেন এই বার্তাই তুলে ধরলেন তাঁরা। জানালেন নিজেদের মনের কথা। বললেন, কন্যাদের প্রতি এমন অবিচার আর কতদিন! কেন কন্যাদের মানুষ অবহেলার চোখে দেখবে, সে প্রশ্নও তুলে দিল এমন সিদ্ধান্তে।
নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের শ্যামনগরের বাসিন্দা দেবাশিস বিশ্বাস এবং মিতালী বিশ্বাস। দুজনেই পঞ্চায়েত অফিসের সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী। দেবাশিস বাবু হিজুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের এবং মিতালী দেবী বনগাঁ গ্রাম পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অফিসার। গতকাল নিজেদের বছর দশেকের কন্যা দেবাদৃতাকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করলেন। দেবাশিস বিশ্বাস জানালেন, সমাজে কন্যা সন্তানদের অবহেলার শিকার হতে হয়। বারবার নানান সামাজিক অত্যাচারের শিকার হন তারা। অথচ সমাজে ছেলেমেয়েদের সমান অধিকার। এসব জানার পরেও বহু মানুষ কন্যা সন্তানদের অত্যাচার করেন। অথচ কন্যারাই পরিবারের আসল লক্ষ্মী। মৃন্ময়ী প্রতিমার বদলে নিজের কন্যা সন্তানকেই চিন্ময়ী রূপে পুজো করে সমাজের কাছে দিলেন এক নতুন বার্তা।
বদল হয়েছে সমাজ ব্যবস্থার। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের তরফে সমাজে কন্যা সন্তানদের তুলে ধরার জন্য কত উদ্যোগই না নেওয়া হয়। তারপরও মাঝেমধ্যেই কন্যা সন্তানের অত্যাচারের চিত্র সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে। আজও কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে সমাজ ও পরিবারের রোষানলে পড়তে হয় বাড়ির মহিলাদের। শুনতে হয় কত গঞ্জনা। অথচ নারী ও পুরুষের যে কোন ভেদাভেদ নেই, এ কথা জেনেও কত অবহেলায় মানুষ করা হয় কন্যা সন্তানদের। নদিয়ার এই দম্পতির সিদ্ধান্ত সমাজের কাছে এক নতুন বার্তা আনবে বলছেন ওয়াকিবহাল মহল। দেবাশিস বিশ্বাস এবং মিতালী বিশ্বাসের এমন সিদ্ধান্তে ধন্য ধন্য করছেন নেটিজেনদের একাংশ।