দূর থেকে দেখলে মনে হবে একটি সুদৃশ্য বাস। এই বুঝি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। হয়তো বাসের হেল্পার বলতে শুরু করবেন, "বোলপুর, বোলপুর। এক্ষুনি ছাড়বে!" কিংবা কোন যাত্রী হয়তো বলে উঠবেন, "এই রোকে! সিউড়ি তো?" বাসের আদলে তৈরি হলেও বাস্তবে এটি একটি আস্ত বাড়ি। সবুজ-হলুদে মেশানো যেন 'ভ্রাম্যমাণ বাস বাড়ি'। আমরা লীলা মজুমদারের 'বাতাস বাড়ি'-র কথা শুনেছি, এ কিন্তু বাস বাড়ি। এ কোন কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি নয়, বাস্তবে এক 'সামান্য' মৃৎশিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় বীরভূমের এক অজ পাড়াগাঁয়ে তৈরি হয়েছে এমন 'বাস বাড়ি' থুড়ি 'বাসা বাড়ি'।
বীরভূমের পাঁড়ুই থানার অন্তর্গত ধানাই গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা উদয় দাস। পেশায় একজন মৃৎশিল্পী। পাশাপাশি তিনি কংক্রিটের বাড়ি বানাতেও সিদ্ধহস্ত। লকডাউনের সময় কাজ হারিয়ে কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। তখনই তাঁর স্বপ্নের বসতবাড়ি তৈরিতে লেগে পড়েন তিনি। তবে শিল্পী মানুষ, মনে সায় নেই। আর চার-পাঁচ জনের মতো গতানুগতিক ধারায় বাড়ি বানাতে কিন্তু বোধ। তখনই ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে শুরু করলেন এই 'অদ্ভুত সুন্দর' বাস বাড়ি। অপরকে মজুরি দিয়ে কাজ করানোর ক্ষমতা নেই, তাই নিজে এবং স্ত্রী-পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে বানিয়ে ফেলেছেন এমন বাড়ি। যা দূর থেকে দেখলে মনে হবে একটি চলন্ত বাস। নামও দিয়েছেন তেমন 'মা লক্ষ্মী ট্রাভেলস'। বাসেরই মতো দরজা, জানলা, ছাদ কিংবা বাসে ওঠার পাদানি। কিন্তু কাছে গেলেই বোঝা যায় আসলে এটি একটি বসতবাড়ি।
শুধু তাই নয়, এই বাস বাড়ির গতিপথ বোলপুর থেকে সিউড়ি। পাশাপাশি বাসের মধ্যে যা যা থাকে হুবহু বাইরে থেকে তেমন। ঠিক যেমন 'পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন' কিংবা বোলপুর সিউড়ি যাত্রাপথে বাসস্টপের নাম। বাসের ভেতরে গেলে দেখা যাবে লম্বায় ২৮ ফুট ও চওড়ায় ৮ ফুটের দুকামরার একটি আস্ত বাড়ি। যেখানে রয়েছে রান্নাঘর, শোবার ঘর থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা। মৃৎশিল্পী উদয় দাস সম্পূর্ণ নিজের ভাবনায় তৈরি করেছেন এমন ডিজাইন। রং-ও করেছেন তিনি-ই। বীরভূমের এই বাস বাড়ি দেখার জন্য রোজ বাড়ছে মানুষের ঢল। এক 'সামান্য' মৃৎশিল্পীর এই শিল্প দক্ষতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা।