দীর্ঘ জল্পনা এবং টালবাহানার পর অবশেষে বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটির নতুন তালিকা হলো প্রকাশিত। বিজেপি রাজ্য কমিটির এই নতুন তালিকায় জায়গা দেওয়া হল বহু নতুন মুখকে। তার সাথেই বাদ গেলেন বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু পরিচিত ব্যক্তিত্ব যাদের দিয়ে এতদিন পর্যন্ত বিজেপি বেশ কিছু জায়গায় নিজেদের ভূমিকা প্রকাশিত করে এসেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ মজুমদার এবং সায়ন্তন বসু। অন্যদিকে, মুকুট এর নতুন পালক যুক্ত হলো সৌমিত্র খাঁ এর। মোর্চার যুব সভাপতি থেকে সরাসরি তিনি এবার হয়ে গেলেন রাজ্যের সহ-সভাপতি। তার ফেলে যাওয়া আসনে বসে যুব মোর্চার নতুন সভাপতি হলেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইন্দ্রনীল খাঁ।
তবে গত কয়েক মাসে সৌমিত্র দীর্ঘ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে ছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে। প্রশ্ন উঠছে, তার এই রকম বাকবিতণ্ডার কারণেই কি তাকে যুব মোর্চার সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে রাজ্য সহ-সভাপতি করা হলো? বিজেপির অন্দরে অন্তত সেরকমটাই গুঞ্জন। রাজ্য সহ-সভাপতি হয়ে খুব একটা বেশি মন্তব্য করতে পারবেন না সৌমিত্র খাঁ। তাকে কিছুটা প্রভাবিত করবেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সাথেই সৌমিত্রের সঙ্গে সহ-সভাপতি থাকছেন জগন্নাথ সরকার। অন্যদিকে, বিজেপির প্রায় তিরিশ বছরের পুরনো রাজ্য নেতা পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্য কমিটি থেকে সরিয়ে দিল ভারতীয় জনতা পার্টি। কলকাতা পুরভোটের সময় থেকেই, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিতর্কে জড়িয়েছেন। কলকাতা পুরোপুরি সংক্রান্ত সাংগঠনিক বৈঠক এর সমস্ত খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে যাবার পরে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল বিজেপি। পরবর্তীতে তাকে কলকাতা পুরভোটের কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
তৃণমূল কংগ্রেসে যেরকম ভাবে এক ব্যক্তি এক পদ নীতি চালু করা হয়েছে, সেরকম ভাবেই বিজেপিতেও চালু করা হলো সেই একই নিয়ম। এতদিন পর্যন্ত মহিলা মোর্চা সভানেত্রী ছিলেন অগ্নিমিত্রা পল। কিন্তু তার জায়গায় এবারে দায়িত্ব পেলেন নতুন একজন মুখ। তিনি তনুজা চক্রবর্তী। এক ব্যক্তি এক পদ নীতিতেই অগ্নিমিত্রাকে সরিয়ে দিয়ে তনুজাকে নিয়ে আসা হয়েছে। অন্যদিকে লকেট চট্টোপাধ্যায় হয়ে গেলেন দলের সাধারণ সম্পাদক। রাজ্যের ৫ জন সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে জায়গা করে নিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। বাকিদের মধ্যে আছেন জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, দীপক বর্মন এবং অগ্নিমিত্রা পল যারা যথাক্রমে এমপি এবং এমএলএ। জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বিজেপির সঙ্গে বহুদিন পথ চলেছেন। তাই সুকান্ত মজুমদার এর ক্যাবিনেট যে বেশ ভারী, সেটা আর নতুন করে বলে দিতে হবে না।
২০ সেপ্টেম্বর দলের রাজ্য সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। দিলীপ ঘোষের উত্তরাধিকার গ্রহণ করে নিয়মিতভাবে বিজেপির উন্নতি সাধন করার লক্ষ্যে কাজ করে গিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তিন মাস পর বুধবার নতুন রাজ্য কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করলেন সুকান্ত। সেখানে উঠে আসে এই 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, যারা সংসদীয় রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই অংশগ্রহণ করে রয়েছেন, তাদেরকে আবার সংগঠনের বিভিন্ন পদে নিয়ে আসা হচ্ছে কেন? দলের সাংগঠনিক বৈঠকে একাধিক চর্চা থাকলেও, বিজেপি নিজেকে পরিষদীয় দল হিসেবেই দাবি করে এসেছে প্রথম থেকেই। তবে অনেকের মতে, বিজেপি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের একটা পরিষদীয় রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ৭০ এর বেশি বিধায়ক নিয়ে বিজেপি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধীদল। তাই এই সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল বলেও অনেকেই মনে করছেন।