ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করার, কিন্তু মানুষের সব স্বপ্ন তো পূরণ হয় না। সংসারের যাঁতাকলে ক্লাস এইট পাশ করেই চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছিল তাঁকে। চাকরিতে যোগ দিয়ে আর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। একদিকে সংসারের দায়িত্ব, অপরদিকে কাজের চাপ - সম্ভব হয়নি পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বয়স এখন ৫৯, সামনের বছরেই অবসর নেবেন তিনি। আচমকাই সিদ্ধান্ত এখন কি ফের পড়াশোনা শুরু করা যায় না? আর একবার কি নিজের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাওয়া যায় না? কথা মতোই কাজ! ৫৯ বছর বয়সে মাধ্যমিক পাশ করলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, ভর্তি হয়েছেন একাদশ শ্রেণিতে। আসলে মানুষের ইচ্ছে এবং জেদ ঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।
প্রভাসচন্দ্র মণ্ডল, বারুইপুর (Baruipur) এসপি অফিসে হোমগার্ড পদে কর্মরত। বয়স এখন ৫৯। সামনের বছরেই তিনি অবসর নেবেন। ক্লাস নাইনে পড়াকালীন তিনি হোমগার্ডের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। সংসারের ঘানি টানতে তাঁর আর পড়াশোনা করা সম্ভবপর হয়নি। এদিকে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর পড়াশোনা করার বাসনা অচিরেই ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু অবসরের আগেই তাঁর মনে ফের সেই সুপ্তবাসনা জেগে ওঠে। কেন ফের কি তিনি পড়াশোনা করতে পারেন না? এই ভাবনা তাঁকে চালিত করে প্রতিটি মুহূর্তে।
যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। অফিসের ডিউটি সেরে পড়াশোনার ক্লাস। বিধাননগর পৌর মুক্ত বিদ্যালয়ে সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস। একদিকে অফিস, অন্যদিকে ক্লাস পড়াশোনা। এই বয়সে সব সামলে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর নিয়ে ঊত্তীর্ণ হয়েছেন। পেয়েছেন ২৮৫ নম্বর। এখানেই শেষ নয়, ভর্তি হয়েছেন একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে। ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ করছেন জীবনের আর এক অধ্যায়ে। বয়স তো কেবল সংখ্যামাত্র। আর এমন কাজে কে না পাশে থাকেন। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার শ্রীমতী পুষ্পা সম্বর্ধিত করেছেন প্রভাসবাবুকে। সত্যিই প্রভাসচন্দ্র মণ্ডল সকলের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন, বলছেন এলাকাবাসী।