দৈনিক রোজগার মেরেকেটে ১৫০ টাকা। পেশায় কমলালেবু বিক্রেতা (Orange Vendor)। তারপরও তিনি স্বপ্ন দেখেন নিজের গ্রামে একটা স্কুল গড়ার। নিজে পড়াশোনা করতে পারেননি বলে খেদ তো ছিলই, কিন্তু গ্রামের বাচ্চারা যাতে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন তার জন্য অবিরাম চেষ্টা এবং তাগিদকে হাতিয়ার করে তৈরি করে ফেলেছেন একটি স্কুল। যেখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ আছে। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭৫ জন। কর্নাটকের ম্যাঙ্গালুরুর বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব হরেকালা হাজাব্বা (Harekala Hajabba)। তেমনই একজন মানুষ। যিনি অল্প অল্প অর্থ জমিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন তেমনই একটি স্কুল। এমন কাজের জন্য তিনি পেলেন দেশের দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী (Padma Shri Award)।
শুরুটা লড়াই দিয়ে। পরিবারের বোঝা টানতে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন তিনি। সংসারের হাল ধরতে শুরু করেন কমলালেবু বিক্রয়। ঝুড়িতে কমলালেবু নিয়ে ঘুরে ঘুরে দিন কাটে হরেকালা হাজাব্বার। এইভাবেই একদিন এক বিদেশি দম্পতি কমলালেবুর দাম জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু তিনি জবাব দিতে পারেননি। কারণ তিনি নিজের কন্নড় ভাষা ছাড়া আর কোন ভাষাই জানেন না। সেদিনেই বুঝতে পারেন ইংরেজি ভাষা জানা কতটা জরুরি। তখনই স্বপ্ন দেখা শুরু করেন নিজের গ্রামে একটা স্কুল তৈরি করার। যেখানে বাচ্চারা পড়তে পাবে, ইংরেজি-সহ অন্যান্য ভাষাও জানবে। কমলালেবু বিক্রি করেই তিনি টাকা জমাতে শুরু করেন। এরপর প্রায় দুই দশক পরে ২০০০ সাল নাগাদ তৈরি করেন তাঁর স্বপ্নের স্কুল। প্রথম অবস্থায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৮, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৭৫। আর সেই মানুষটি এমন সম্মান পাওয়ায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনদের একাংশ।
কেবল একটি স্কুল তৈরি করেই কি থেমে যাবেন হরেকালা হাজাব্বা? না, স্বপ্ন তাঁর আরও অনেক। পুরস্কারের প্রাপ্ত টাকায় তিনি একটি কলেজ করতে চান। এমনকী নিজের স্কুলটিকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নিয়ে যেতে চান। এখানেই শেষ নয়, আরও স্কুল গড়ে সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চান। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দের কাছ থেকে খালি পায়ে পুরস্কার নেওয়ার সময় তাঁর আত্মপ্রত্যয়ী বিশ্বাস সমাজের কাছে নতুন এক প্রেরণা দেবে, বলছেন ওয়াকিবহাল মহল।