খুব অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয়। ক্লাস সেভেন পাশ করার পর আর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। সংসারের ঘানি টানতে টানতে পড়াশোনার পাঠ চুকে গেছে সেই কবে। ৩০ বছর পর মনে হল যদি মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসা যায়! কাকতালীয় ভাবে নিজের ছেলেও এবার মাধ্যমিক দেবে। বাবা-ছেলের একযোগে লড়াই। যদিও লড়াই শেষে জিতলেন বাবা, হেরে গেল ছেলে। মাধ্যমিকে বাবা পাশ করলেও ছেলে কিন্তু পাশ করতে পারেনি।
ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের পুনের। ভাস্কর ওয়াঘমাড়ে নামে বছর ৪৩-র এক ব্যক্তি এবার মহারাষ্ট্র স্টেট বোর্ড অব সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি বোর্ডের অধীন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন। সঙ্গে তাঁর ছেলে শাহিলও পরীক্ষায় বসেছিল। শুক্রবার সেই পরীক্ষার ফলাফল বেরিয়েছে। তাতে ঘটে গেছে চমকপ্রদ ঘটনা। ভাস্কর ওয়াঘমাড়ে পাশ করেছেন, কিন্তু ছেলে শাহিল পাশ করতে পারেনি। দু'টি পেপারে অকৃতকার্য হয়েছে শাহিল।
ভাস্কর ওয়াঘমাড়ের বক্তব্য, সংসারের হাল টানতে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারিনি। এত বছর পর ছেলের পড়াশোনা দেখে আমারও পড়াশোনার আগ্রহ তৈরি হয়। নিজের কাজ সামলে রাতে বাড়ি ফিরে পড়াশোনার প্রস্তুতি নিতাম। সমস্ত বিষয়ই খুটিয়ে পড়েছি। সফল হয়েছি। তবে ছেলের ফলাফলে কষ্ট পেয়েছি। এমন হবে আশাও করিনি। আগামীতে ছেলেকে পড়াশোনায় সাহায্য করব। নিজে পড়াশোনা করতে পারিনি বলে আপশোষ ছিল, ছেলের যেন এমন না হয়।
যদিও ছেলে শাহিলের কুছ পরোয়া নেই। ফেল করায় কোন দুঃখও নেই। ছেলে সাফ জবাব, আমি পাশ করতে পারিনি তো কী হয়েছে, বাবা পাশ করেছে, তাতেই আমি খুশি। আমি বাবার কাছেই ফের প্রস্তুতি নেব। বাবা যখন পাশ করেছে, আমিও ঠিক পাশ করব।
বয়স যে কেবল একটা সংখ্যামাত্র দেখিয়ে দিয়েছেন পুনের বাবা সাহেব আম্বেদকর কলোনির বাসিন্দা ভাস্কর ওয়াঘমাড়ে। ইচ্ছাশক্তি, সাহস এবং মনের জেদ দিয়ে সবকিছুই জেতা যায়। অনেকেই বলছেন, ভাস্কর ওয়াঘমাড়ের এই কৃতিত্বের গল্প অনেককেই অনুপ্রেরণা যোগাবে। ছেলেরা তো বাবাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পান, আগামী দিনে ভাস্কর ওয়াঘমাড়ে সকলের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।