লাগাতার পঞ্চম বারের জন্য স্বচ্ছতম শহর হিসেবে চিহ্নিত হলো মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর। শনিবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ দেশের সবথেকে স্বচ্ছ ১০ শহরের হাতে স্বচ্ছ সমীক্ষা ২০২১ পুরস্কার তুলে দিলেন। তবে এই তালিকায় ভারতের সবথেকে বড় বড় শহরগুলি যেমন কলকাতা কিংবা দিল্লী, মুম্বাই কোনটাই নেই। তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু ছোট ছোট শহর। কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয় তরফ থেকে বিগত ছয় বছর ধরে সমীক্ষা চালিয়ে দেশের সেরা ১০ টি শহরকে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। আগের বারের মতো এবারেও দেশের সবথেকে স্বচ্ছ শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ইন্দোর।
অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে গুজরাটের সুরাট, তৃতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া। গঙ্গার ধারে অবস্থিত সবথেকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে উত্তর প্রদেশের বারানসি। অন্যদিকে, জাতীয় সমীক্ষায় সবথেকে স্বচ্ছতম রাজ্য হিসেবে উঠে এসেছে ছত্রিশগড়। মধ্যপ্রদেশের স্থান স্বচ্ছতা অভিযানে বেশ কিছুটা ওপরের দিকেই বলা যেতে পারে। তবে শুধুমাত্র ইন্দোর নয়, মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপাল এই তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
তার পাশাপাশি গুজরাট রয়েছে এই তালিকায় বেশ কিছু জায়গায়। দেশের সবথেকে স্বচ্ছ ১০ টি শহরের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে গুজরাটের তিনটি শহর। নবি মুম্বাই চতুর্থ স্থানে রয়েছে। পঞ্চম স্থানে আছে পুনে, ষষ্ঠ স্থান লাভ করেছে ছত্রিশগড়ের রায়পুর, সপ্তম স্থানে ভূপাল, অষ্টম স্থানে আছে ভদোদরা, ৯ নম্বর স্থানে রয়েছে বিশাখাপত্তনম এবং সবশেষে ১০ নম্বর স্থানে রয়েছে আহমেদাবাদ। কেন্দ্রীয় তথ্য অনুযায়ী দেশের প্রায় সবকটি শহরের উপরে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল এবং সেখানকার নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করে তার পরেই এলাকার স্বচ্ছতা বিচার করা হয়েছিল। প্রায় পাঁচ কোটির বেশি নাগরিক নিজেদের মতামত জানিয়েছেন এই সমীক্ষায়। জানা যাচ্ছে, করোনা সংক্রমনের কারণে একেবারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাত্র ২৮ দিনের মধ্যে এই সমীক্ষা পূরণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকারের আবাসন এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রকের তরফ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির স্বচ্ছ ভারত মিশন ২.০ এর অধীনে জঞ্জালমুক্ত ভারতের যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল তার অধীনে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে স্বচ্ছ অমৃত মহোৎসব। এই অনুষ্ঠানে স্বচ্ছ শহরগুলিকে পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি সেই শহরের সমস্ত সাফাই কর্মীদের বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে। সাফাই মিত্র সুরক্ষা চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারী সেরা শহরগুলিকে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় বর্তমানে রাজ্য এবং শহরগুলির স্বচ্ছতা এবং সচেতনতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে।
গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত স্বচ্ছতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে দেশের বেশ কিছু শহরে।প্রায় দেড় হাজারের বেশি পুরসভায় প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে। বেশ কিছু জায়গায় লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশকিছু রাজ্যে স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রভাব দেখিয়েছে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। চলতি বছরের পহেলা অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বচ্ছ ভারত মিশন অভিযান এর দ্বিতীয় দফার সূচনা করেছিলেন। গত সাত বছর ধরে স্বচ্ছ ভারত মিশন দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় গিয়ে কর্মসূচি করছে। সারা দেশ জুড়ে ৭০ লক্ষ শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে মহিলা, রূপান্তরকামী এবং শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য। তার পাশাপাশি দেশের বেশ কিছু জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন তৈরি করা হচ্ছে মানুষকে স্বচ্ছতা এবং পরিছন্নতা নিয়ে উপদেশ দেওয়ার জন্য। স্বচ্ছ ভারত অভিযান বলতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম সফল অভিযানের মধ্যে একটি। যার সুফল বর্তমানে ভারত বিভিন্ন জায়গায় পেতে শুরু করেছে।