ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশে সাধারণ নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। অযোধ্যা মন্দির, একাধিক ধর্ষণের ঘটনা, সবকিছুকে হাতিয়ার করেই উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া প্রতিদ্বন্দিতা দিতে চলেছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। কিন্তু, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবে? এই বিষয়টি নিয়ে গো-বলয়ের রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জল্পনা ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবারে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বট্রা। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী সালমান খুরশিদের সম্ভাবনামূলক মন্তব্যের পর এই জল্পনা আরো জোরালো হয়েছিল। সালমান খুরশিদ মন্তব্য করেছিলেন, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে পারেন উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের জন্য। শনিবার সেই জল্পনা আরো একবার উস্কে দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সালমান খুরশিদ।
প্রয়াগরাজ নিজের সফর চলাকালীন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সালমান খুরশিদ বললেন, ' আগামী উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে লড়তে চাইছে কংগ্রেস। এবারে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দলের মুখ্যমন্ত্রী মুখ হবেন কিনা সেই নিয়ে তাকে নিজেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।' যদিও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে লড়ার কথা আগেও ঘোষণা করেছিলেন কংগ্রেসের এই প্রবীণ আইনজীবী নেতা। সেই সময় দলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রায়বরেলিতে একটি জনসভা করার সময় তিনি জানিয়েছিলেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে একক ক্ষমতায় লড়তে চাইছে কংগ্রেস। অন্য কোন দলের সঙ্গে কোনো রকম যোগ বা আসন সমঝোতা করতে চাইছে না কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশের সব কটি আসনে প্রার্থী দিতে চলেছে তারা। আর এই নির্বাচনী বৈতরণী পার করার জন্য তাদের একমাত্র ভরসা যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, সেটাও তিনি আরও একবার জানিয়ে দিয়েছিলেন গতদিনের সভা থেকে।
স্থানীয় মানুষের সমস্ত চাহিদা, দলীয় সংগঠনের হাল-হকিকত যাচাই করে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রের সফর করছেন বর্তমানে কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা। সালমান খুরশিদ বলছেন, 'দলীয় কর্মীরা লাগাতার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের অভাব অভিযোগ এবং দুর্দশার কথা শুনে এসেছেন। সেই অভাব-অভিযোগের কথা জায়গা পাবে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে।' অন্যদিকে, চলতি মাসের ১২ তারিখ সোনিয়া গান্ধী লোকসভা কেন্দ্র তথা দলের সবথেকে শক্তিশালী জায়গা হিসেবে পরিচিত রায়বরেলিতে দুদিনের সফরে এসেছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সেখানে বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করেছিলেন। দুদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ এলাকা চষে ফেলেছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কর্মীদের সঙ্গেও তিনি কথা বলে তাদের মনোবল বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছিলেন। কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বার্তা দিয়েছিলেন, যেহেতু আমাদের ক্ষমতা উত্তরপ্রদেশে কিছুটা কম তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচন অবধি প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টা টানা কাজ করতে হবে। যেহেতু উত্তরপ্রদেশের বাকি বিরোধীদলের তুলনায় কংগ্রেসের প্রভাব সেই রাজ্যে অনেকটা কম এই কারণেই মূলত সর্বশক্তি দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা আবারও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে কংগ্রেস।
অন্যদিকে রবিবার অন্য একটি জনসভায় সরাসরি উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার কে কটাক্ষ করলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি অভিযোগ তুললেন, উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার সম্পূর্ণরূপে ফেল করেছে বেশ কিছু জায়গায়। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে, চাষীদের সুবিধা দেওয়া সবকিছু নিয়েই ভারতীয় জনতা পার্টির সরকারকে একহাত নিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। আজকের জনসভা থেকে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত হুঙ্কারের সুরে বেশ কিছু কথা বললেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি বললেন, "এই যে সাড়ে চার বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ এর সরকার রয়েছে, তাদেরকে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত ছিল। মানুষের সমস্যার সমাধান করা উচিত ছিল তাদের। কিন্তু তারা কি করেছে? মিথ্যা, মিথ্যা আর কতগুলো মিথ্যা বলে গেছে।"