১৩ মিনিটের ভাষণেই ভারতের সাধারণ নাগরিকদের জন্য তিনটি বড় ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল টিকাকরণের বুস্টার ডোজ নিয়ে। বড়দিনের শুভেচ্ছা জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই নতুন ইংরেজী বছরের শুরুতে ভারত সরকারের নতুন কিছু পরিকল্পনার ব্যাপারে জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদি বললেন, আগামী বছরের শুরু থেকে অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি থেকে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য টিকাকরণ অভিযান শুরু করবে ভারত সরকার, যার ফলে উপকৃত হতে চলেছে ভারতের বিপুল সংখ্যক টিনেজাররা। শনিবার রাত্রে পৌনে দশটা নাগাদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ রাখলেন মোদি যেখানে স্বাস্থ্য কর্মী এবং করোনা যোদ্ধাদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বললেন, 'করোনাভাইরাস এখনো পুরোপুরি ভারত থেকে চলে যায়নি। নতুন রূপে সামনে এসেছে ওমিক্রন। এই পরিস্থিতিতে আমাদের আরো ভালোভাবে কাজ করতে হবে করোনাভাইরাস এর বিরুদ্ধে। নতুন ভেরিয়েন্ট আক্রান্তদের তালিকা ইতিমধ্যেই দীর্ঘ হতে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে আমাদের যথাযথভাবে করোনাভাইরাস বিধি পালন করতে হবে। দেশে চিকিৎসা পরিকাঠামো করোনাভাইরাস এর জন্য পুরোপুরি ভাবে তৈরি। ১৮ লক্ষ্য আইসোলেশন বেড এবং লক্ষাধিক আইসিইউ বেড তৈরি করা হয়েছে। "
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা বলছেন, "এই মুহূর্তে এই সিদ্ধান্ত খুবই জরুরি ছিল। বর্তমানে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ানোর একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা খুবই ভালো একটা সিদ্ধান্ত। বর্তমানে ওদের কলেজ স্কুল সব খুলে গেছে। ওদের বাইরে বের হতে হচ্ছে। এই অবস্থায় সব দিক থেকে দেখতে গেলে ছোটদের ক্ষেত্রে টিকাকরণ এর প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এবার যদি তারা টিকা পেয়ে যায় তাহলে করোনাভাইরাস এর বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারবে। টিকাকরণ এর ফলে সংক্রমণ কতটা কমবে সেটা এখনও জানা যাচ্ছে না, কিন্তু মৃত্যুহার যে লক্ষ্যণীয়ভাবে কমেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।'
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরো ঘোষণা করলেন, আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য কর্মী এবং করোনাভাইরাস যোদ্ধাদের বুস্টার টিকা করন করা হবে। এছাড়াও তিনি জানালেন, ৬০ ঊর্ধ্ব সকল ব্যক্তি যাদের, কো-মর্বিডিটি আছে তাদেরকেও বুস্টার টিকা দেওয়া হবে ভারত সরকারের তরফ থেকে। তবে অবশ্যই তাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে তার আগে। ১০ জানুয়ারি থেকে তাদের বুস্টার টিকাকরণের কর্মসূচি শুরু করবে ভারত সরকার। নতুন বছরের আগে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী বললেন, নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আগে ভারত সরকারের তরফ থেকে ভারতের সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
তার সঙ্গেই আজকের ভাষণ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সারা দেশবাসীকে করোনাভাইরাস বিধি পালনের পরামর্শ দিলেন। মোদি বললেন, 'এখনো করোনাভাইরাস আমাদের মধ্যে রয়েছে। তাই সুরক্ষিত থাকতে সবসময় মাস্ক পরুন, সব সময় হাত ধুন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সুরক্ষিত থাকা সব সময় প্রয়োজনীয়। ভ্যাকসিন এর উপরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা ছাড়াও আমরা আমাদের দেশের তৈরি ভ্যাকসিনের অ্যাপ্রুভাল, ইনফরমেশন টেকনোলজি সাপোর্ট সিস্টেম এবং সার্টিফিকেশনের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছি। আমাদের সমস্ত ধরনের প্রচেষ্টার ফল স্বরূপ ভারত এই বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে সর্বসাধারণের জন্য ভ্যাক্সিনেশন শুরু করেছিল। আজ ভারতের প্রাপ্তবয়স্ক জনসাধারণের মধ্যে ৬১ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন এর দুটি ডোজ গ্রহণ করে ফেলেছেন। তার সঙ্গেই, ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের অন্তত একটি ডোজ টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। আমি চাই বাকিরাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পূর্ণ টিকাকরণ করিয়ে ফেলুন। আমাদের করোনাভাইরাস এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আর এর জন্য আপনার সাহায্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন।'