প্রায় একমাস হতে চলল ভারতীয় ড্রাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ‘মডার্না’র কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছেন। পাশাপাশি ফাইজার ভ্যাক্সিন নিয়েও আশার কথা শুনিয়েছেন আধিকারিকেরা। কিন্তু ভারতে দুটি ভাক্সিনের একটাও ইহযাবদ ‘বেপাত্তা’। এবং ভবিষ্যতেও তাদের আগমন নিয়ে যথেষ্ট ধন্দে রয়েছে ভারতবর্ষ। অপরদিকে ভারতের পড়শি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানেও দেদার রপ্তানি হচ্ছে ওই দুটি ভ্যাক্সিন।
বিগত মাসের ২৯ তারিখ ডিসিজিআই(ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া)–এর তরফ থেকে জরুরি ভিত্তিতে মডার্নার ব্যবহারে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, কোভ্যাক্সিন, কোভিশিল্ড এবং স্পুটনিকের পরে এটিই ছিল চতুর্থ ‘বৈধ’ ভ্যাক্সিন। এরপর ২রা জুলাই কেন্দ্রীয় সরকার দাবী করেন, কিছুদিনের মধ্যেই ভ্যাক্সিন এসে উপস্থিত হবে ভারতে। ২০ তারিখ আবার ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেসনের(হু) রিজিওনাল ডিরেক্টর ড. পুনাম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, মডার্না হু-এর কোভ্যাক্স প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভারতকে ৭৫ লক্ষ ভ্যাক্সিন দেওয়ার সঙ্কল্প করেছে। যদিও এখনও পর্যন্ত মডার্নার ‘দেখা নাই’।
এ বিষয়ে আমেরিকার ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক ঐ সংস্থার দাবী, তাদের কাছে বিশ্বজুড়ে ভাক্সিনের এত বেশি অর্ডার আছে যে তারা ২০২২ সাল পর্যন্ত অন্য কোনও দেশেই বাণিজ্যিকভাবে টিকা রপ্তানি করতে পারবে না।
যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ঐ দুই ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক সংস্থার ভারতকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। যার পিছনে রয়েছে ভারত সরকারের ‘ক্ষতিপূরণ শর্ত’(ইনডেমনিটি ক্লজ), যে শর্ত অনুযায়ী এই দুই ভ্যাক্সিন ভারতীয়দের শরীরে কোনও বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে উক্ত ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক সংস্থা-কে। যদিও ২রা জুন ভারত সরকার ঐ দুই ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে ‘ক্ষতিপূরণ শর্ত’-তে ছাড় দেওয়ার কথা বলেছিল, কিন্তু পরে তার থেকে পিছিয়ে আসে।
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সুত্রের খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ফাইজার জুলাই মাসে বেশ কিছু ভ্যাক্সিন এ দেশে সরবরাহ করবে। সাথে এও বলা হয়েছে, অন্যান্য দেশের ভ্যাক্সিন সম্বন্ধীয় নিয়মাবলী দেখে এ দেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্যাক্সিন আমদানি করবে সরকার। এ বিষয়ে নীতি আয়োগ-এর সদস্য ড. ভি কে পল বলেন, সরকার ‘সক্রিয়’ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে মডার্না-র ভ্যাক্সিন দ্রুত এদেশে আসে। তিনি আরও বলেন, যদিও এ বিষয়ে আলোচনা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, তবে তাঁরা চেষ্টা করছেন যত দ্রুত সম্ভব এর ফয়সালা করার।
অন্যদিকে ৩রা জুলাই ভারতের পড়শি দেশ পাকিস্তান, আমেরিকার থেকে ৩৫ লক্ষ মডার্না ভ্যাক্সিন আমদানি করেছে। একই দিনে ২৫ লক্ষ মডার্না ভ্যাক্সিন পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কা ছিল প্রথম দেশ যে কিনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম ফাইজার ভ্যাক্সিন আমদানি করেছিল।
একদিকে দেশে ভ্যাক্সিনের আকাল, অন্যদিকে ভ্যাক্সিন দাবীতে সরব বিরোধীদের খোঁচায় জর্জরিত শাসকদল। তার মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুটি ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক সংস্থার সাথে ভ্যাক্সিন আমদানি নিয়ে দোলাচলে পড়ে কার্যত ‘ব্যাকফুটে’ মোদী সরকার। যদিও এদেশে প্রিফজার-মডার্না আসার বিষয়ে আশাবাদী সরকারমহল, তবুও এদেশে ভ্যাক্সিন আসার 'রোডম্যাপ' যে যথেষ্ট ধোঁয়াশায় মোড়া, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।