নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা জয়ের। কিন্তু সেই স্বপ্ন সম্পূর্ণরূপে ধূলিসাৎ করে দিয়ে দেশের রাজনীতিতে বর্তমানে একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে উঠে এসেছে বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার তৃণমূল কংগ্রেস বর্তমানে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থাকলেও সারা ভারতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জানেন না এরকম লোক কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর, বলাই বাহুল্য বর্তমানে কংগ্রেস নয় বরং বিরোধী দলের প্রধান মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙা পায়ে খেলা থেকে শুরু করে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত, সবদিকেই কেন্দ্রীয় সরকারকে একের পর এক গোল দিয়ে এসেছেন মমতা। তাই এবারে ইউপিএ অর্থাৎ ভারতের প্রধান বিরোধী দলের জোট (বর্তমানে সর্বাধিক ক্ষমতা বিশিষ্ট দল কংগ্রেস) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাদের মুখ বানিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করতে চাইছে। শুধুমাত্র কিছু ছোটখাটো রাজনৈতিক দল নয়, ইউপিএ জোটের শরিক এনসিপি, তামিলনাড়ুর ডীএমকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স, তেজস্বী যাদব এর আরজেডি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, থেকে শুরু করে আরো বেশকিছু রাজনৈতিক দল এই তৎপরতা শুরু করেছে। এমনকি এই জোটের সব থেকে বড় শরিক কংগ্রেস নাকি একই মতামত পোষণ করছেন বলে জানা যাচ্ছে। ফলে, এবারে কিন্তু মোদি এবং অমিত শাহ এর বিরুদ্ধে আরো বড় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিছুদিন আগেই মাইক্রো ব্লগিং প্লাটফর্ম টুইটারে ট্রেন্ড হচ্ছিল #BengaliPrimeMinister। কংগ্রেসের জি-২৩ সম্মেলনেও গোলাম নবী আজাদ, শশী থারুর, মনিষ তিওয়ারি, কপিল সিব্বল, রেনুকা চৌধুরী এবং মিলিন্দ দেওয়ার মতো অনেকে কংগ্রেসের মধ্যে সংস্কার চেয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্যেই কংগ্রেসের বেশ কয়েক জন রয়েছেন যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রাখতে চাইছেন। রাহুল গান্ধীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বর্তমানে কংগ্রেসের অন্দরেই প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গেছে। মাঝখান দিয়ে টুইটারে ট্রেন্ডিং আসার পরে বাঙালি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি কিন্তু গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সমস্ত বিরোধী দলগুলি। তৃতীয়বারের জন্য বাংলায় ক্ষমতায় এসে মোদি এবং অমিত শাহের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন মমতা। তার সঙ্গে অব্যাহত বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত মাঝেমধ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। বঙ্গ বিজেপির অনেকে তৃণমূলে চলে আসার ভাবনা পোষণ করছেন। ফলে ঘরে-বাইরে বিজেপির অবস্থা শোচনীয়।
এই পরিস্থিতিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে গোটা দেশের বিরোধী শিবির। ২০১২ সালে শেষবারের মতো ইউপিএ দলের সঙ্গে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সঙ্গ ত্যাগ করার পরে ইউপিএ পরবর্তী ১০ বছরে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে এনডীএ। কিন্তু তাদের প্রধান শরিক বিজেপির বিরুদ্ধে ল্যান্ড স্লাইড ভিক্টরির পরে টুইটারে এমকে স্টালিন থেকে শুরু করে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মেহেবুবা মুফতি, অখিলেশ যাদব, চন্দ্রশেখর রাও সহ বহু বিরোধীদলের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। এমনকি, কিছু কিছু ইস্যুতে মমতার সঙ্গে একই সুরে সুর মেলাচ্ছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই ভিজায়ান। সবার জন্য ভ্যাকসিনের দাবিতে চিঠিতে সই করেছেন সোনিয়া গান্ধী, শরদ পাওয়ার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহ সিপিএমের ডি রাজা এবং সীতারাম ইয়েচুরি। অন্যদিকে, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সখ্যতাও কিন্তু উল্লেখযোগ্য। কংগ্রেসের সঙ্গে ছাড়লেও সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক এখনো বেশ ভালো। তাই রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন আগামী লোকসভা নির্বাচনে ইউপিএ জোটের প্রধান মুখ হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবারের ইউপিএ জোট কিন্তু আগের বারের থেকে আরো বড় হতে পারে। তার সাথেই বিরোধী দলনেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা দেশ জোড়া। যদি সমস্ত সমীকরণ মিলে যায়, তাহলে হয়তো ২০২৪ সালে ভারত পাবে ইতিহাসের প্রথম বাঙালি প্রধানমন্ত্রীকে।