বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত বিএসএফ জওয়ানদের ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে এবং আরো অন্যান্য বিষয় নিয়ে মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদি এবং মমতার এই সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন অঙ্গ হিসেবে ছিল রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন, এবং রাজ্যের বিএসএফ জওয়ানদের ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার আর্জি। সাক্ষাৎকারের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিএসএফ জাওয়ানদের ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে কথা হয়েছে। আমি তাকে জানিয়েছি, ভারতের সাংবিধানিক পরিকাঠামো কিন্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই কারণে, বিএসএফ জওয়ানদের ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিবেচনা করা উচিত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফরের পর আরও বললেন, " আমি আজকে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করলাম এবং তার সাথে বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে যে সামঞ্জস্য থাকা উচিত সেই নিয়ে বেশ কিছু কথা হল আমাদের মধ্যে। মূলত বিএসএফ জওয়ানদের সীমান্তে ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হল আমাদের মধ্যে। আমি তার কাছে আর্জি রাখলাম, যেন কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে। আমি আর্জি রাখলাম যেন এই সিদ্ধান্ত তুলে নেওয়া হয়।"
তিনি আরো জানালেন, "আমি তাকে জানিয়েছি, আপনি ভারতের সীমান্তের সুরক্ষা করুন। রাজ্য সরকার আপনাকে সাহায্য করবে। কিন্তু কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সামঞ্জস্য কখনোই ভঙ্গ করা উচিত নয়। এই মুহূর্তেই আমাদের কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক আরো ভালো করা উচিত। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গকে আরও বেশ কিছু টাকা পাঠানো উচিত। ইতিমধ্যেই আমাদের এখানে বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে গিয়েছে এবং এই জন্য আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য খরচ করতে হয়েছে বেশ কিছু টাকা। এই কারণে আমাদের বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে।" প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে কেন্দ্রীয় সরকারের বিএসএফ জওয়ানরা ১৫ কিলোমিটার অঞ্চলের মধ্যে তদারকি করতে পারত এতদিন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে সম্প্রতি একটি নতুন আইন নিয়ে এসে বিএসএফ জওয়ানদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে এবার থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিএসএফ জওয়ানরা সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত তদারকি করতে পারবে, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের কোনো অনুমতি ছাড়া। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরেই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সমস্যা চরমে ওঠে।
যদিও শুধুমাত্র এই বিষয়টি নিয়ে কথা হয়নি তাদের দুজনের মধ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি পশ্চিমবঙ্গের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং ভ্যাক্সিনেশন ড্রাইভ নিয়েও বেশ কিছু আলোচনা করেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরো বেশ কিছু করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন এর ডোজের দাবি জানিয়েছেন বাংলার জন্য। এছাড়াও মমতা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের যতই তফাৎ হোক না কেন কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারকে সবসময় সমন্বয় মেনে কাজ করা উচিত এবং রাজ্যের অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও ত্রিপুরার বিষয় নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সায়নী ঘোষের গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন মমতা।