২০১৪ সালে শেষ ট্রফি জয়। তারপর দীর্ঘ সাত বছরের অপেক্ষা। ২০২১ আইপিএলে ফাইনালে উঠে আবারও ট্রফির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আশায় বুক বেঁধেছিল লক্ষ লক্ষ বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমী। তবে শেষপর্যন্ত শেষরক্ষা হল না। চেন্নাইয়ের ছুঁড়ে দেওয়া পর্বতপ্রমাণ ১৯৩ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১৬৫ রানেই নিজেদের দৌড় থামাল কেকেআর। আর সেইসঙ্গে অধরা থেকে গেল তাদের তৃতীয় আইপিএল ট্রফি জয়ের স্বপ্ন। একইসাথে চতুর্থবারের জন্য আইপিএলে সেরার শিরোপা জিতে নিল ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস।
টসে জিতে আজ বোলিং বেছে নেন কলকাতার অধিনায়ক ইওন মর্গান। তবে আজ ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাটিং শুরু করেন ঋতুরাজ(৩২) এবং ফাফ দু’প্লেসি(৮৬)। পাওয়ারপ্লেতে ৫০ রান তুলে নেন ঋতু-দু’প্লেসি জুটি। দলের ৬১ রানের মাথায় ঋতুরাজ গাইকোয়াডকে ফেরান সুনীল নারিন। এরপর নামেন কলকাতারই প্রাক্তন খেলোয়াড় এবং ২০১২ এবং ২০১৪ সালে কেকেআরের চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য উত্থাপ্পা। মাঠে নেমেই তিনি ধারন করেন সংহারমূর্তি। মাত্র ১৫ টি বল খেলে দলের স্কোরবোর্ডে তিনি যোগ করেন মুল্যবান ৩১ রান। তবে তাঁকেও ফেরান সেই নারিনই। ম্যাচের শেষদিকে মইন আলির (৩৭*) আগুনে ব্যাটিংয়ের সুবাদে ৩ উইকেটের বিনিময়ে চেন্নাই তাদের স্কোরবোর্ডে তোলে ১৯২ রান। কলকাতার হয়ে দুটি উইকেট পান নারিন। একটি উইকেট তুনে নেন শিভম মাভিও। তবে ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জঘন্য বোলিং করেছেন ফার্গুসন, শাকিবের মতো অভিজ্ঞ বোলাররা। ৪ ওভার বল করে ফার্গুসন দিয়েছেন ৫৬ রান। মাত্র তিন ওভার বল করেই শাকিব দিয়েছেন ৩৩ রান।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগের দুটি ফাইনালেও কলকাতার সামনে ছিল প্রকাণ্ড রানের টার্গেট। দুবারেই সেই বিশাল রান তাড়া করে কলকাতা ট্রফি ছিনিয়ে নেয়। এবারেও তেমনটাই হবে বলে আশা করেছিলেন কেকেআর সমর্থকেরা। সেইমতো দুরন্ত শুরুও করে গিল এবং ভেঙ্কি আইয়ার। দুজনেই কেকেআরের স্কোরবোর্ডে যোগ করেন মুল্যবান দুটি অর্ধশতরান। ১০.৪ ওভারে শার্দূলের বলে আউট হন ভেঙ্কাটেশ আইয়ার (৫০)। সেই ওভারের শেষ বলেই অবিবেচকের মতো শট খেলে আউট হন নীতিশ রানা (০)। ফাটকা রানের আশায় ব্যাট করতে নামানো হয় সুনীল নারিনকে। তবে তিনিও বিশেষ কিছু করতে পারেননি আজ। মাত্র ২ রান করেই হ্যাজেলউডের বলে ক্যাচ তুলে ঘরে ফেরেন তিনি। আর এর পরেই চেন্নাইয়ের বোলিংয়ের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে থাকে কলকাতার ব্যাটিং অর্ডার। নাইট রাইডার্সের রথী-মহারথী ব্যাটসম্যানদের রানের সংখ্যা এরকম – মর্গান ৪, দীনেশ কার্ত্তিক ৯, শাকিব-আল-হাসান ০, ‘চোটগ্রস্ত’ রাহুল ত্রিপাঠী ২। যাঁরা সচরাচর ক্রিকেট খেলা দেখেন না তাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে এমন ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছাল কিভাবে কেকেআর? যদিও শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাট হাতে লড়াই চালিয়ে যান কলকাতার দুই বোলার শিভম মাভি (১৩ বলে ২০) এবং লোকি ফার্গুসন (১১ বলে ১৮), তবে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে কেকেআরের। শেষপর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রানেই আটকে যায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের রথ। সিএসকের হয়ে তিনটি উইকেট পান শার্দূল ঠাকুর, দুটি করে উইকেট পান জাদেজা এবং হ্যাজেলউড, একটি উইকেট পান দীপক চাহার।
আজকে জয়ের পর এই নিয়ে চতুর্থবারের জন্য আইপিএল ট্রফি নিজেদের ঘরে তুলে নিল চেন্নাই সুপার কিংস। ৪০ বছর বয়সে এসেও ধোনি দেখিয়ে দিলেন, এখনও তিনিই কেন সেরা? আর সেই সাথে আজকের ম্যাচ কলকাতার জন্যও তুলে দিল বেশ কিছু প্রশ্ন। হাইস্কোরিং পিচে রাসেলের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানকে কেন খেলানো হল না? অনুকূল পরিস্থিতিতে থেকেও অবিবেচকের মতো উইকেট হারানোর কারন কি? ফাইনালে এসে আচমকাই বোলিং এতো দুর্বল হয়ে পড়ল কিভাবে? প্রভৃতি। আগামী বছর থেকে আইপিএলের মহা অকশান। সব দল থেকেই বদল হবে খেলোয়াড়। আসবেন অনেক নতুন খেলোয়াড়। আশা থাকবে এবছরের ভুলগুলিকে শুধরে নিয়ে পরের বার নতুন রূপে ময়দানে নামবে কলকাতা নাইট রাইডার্স। দশমীতে মা দুর্গার বিদায়ের বিষাদের মাঝেই স্বপ্নভঙ্গ কেকেআর সমর্থকদের। তবে আজকেই তাঁদের সবথেকে ভালভাবে বলার সুযোগ, ‘আসছে বছর আবার হবে’!