খুব শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম রাজ্য মনিপুরের বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই এই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে জোর কদমে। এবারে সেই নির্বাচনের আগেই আজ দুপুরে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে পৌঁছে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবারের মনিপুরের সফর থেকে তিনি একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন। তার পাশাপাশি বিরোধীদলকে কটাক্ষ করেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে শুরু করলেন ভোট প্রচার। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন। তার সাথেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন আরো নয়টি প্রকল্পের। তার সঙ্গেই আজকের ভাষণ থেকে আগের সরকারের কটাক্ষ করে মনিপুরের মর্যাদা আবারো নিজের জায়গায় ফেরানোর চেষ্টা করলেন মোদি।
মঙ্গলবার এর ভাষণে মোদি বললেন, 'একটা সময় ছিল যখন মনিপুরের দিকে কেউ নজর দিত না। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য বলে আগের সরকার ফিরেও তাকাতো না মনিপুরের দিকে। কিন্তু কেন্দ্রে বিজেপি আসার পরেই মনিপুরের উন্নতিতে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আমি প্রধানমন্ত্রী হবার পরে একাধিকবার মনিপুর সফর করেছি। উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের কষ্টটা আমি বুঝি। ২০১৪ সালে যখন আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হই তখন দিল্লিকে মনিপুরের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। এখন আপনি বাড়ির কাছেই কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত সার্ভিস কেন্দ্র পেয়ে যাবেন। শুধু কেন্দ্রীয় সরকারকে মনিপুরের প্রত্যেকটি মানুষের বাড়ির কাছে নিয়ে আসাটাই সব নয়। আমরা মণিপুরে একটি স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।'
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরো বললেন, "মনিপুরের প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িতে এখনো পর্যন্ত ট্যাপকলের জলের ব্যবস্থা রয়েছে। আগে, মনিপুরের বাড়িতে জল পাওয়া যেত না। প্রধানমন্ত্রী হর ঘর জল কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা মনিপুরের প্রতি ঘরে ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ৬০ শতাংশ বাড়িতে ট্যাপকলের জল পৌঁছে গেছে। বাকি জায়গায় জল পৌঁছানোর কাজ চলছে। আমরা ডবল ইঞ্জিন স্থায়ী সরকার স্থাপন করে মনিপুরের প্রতিটি এলাকাকে আরও উন্নত করতে চাই।"
তার পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। এদিন কার ভাষণে মোদি বললেন, 'আর কয়েকদিন পর ২১ জানুয়ারি মনিপুর রাজ্যের ৫০ বছরের বর্ষপূর্তি হতে চলেছে। এই রাজ্যের মানুষের জন্য এটা একটা গর্বের মুহূর্ত। এমন একটা সময় ছিল যখন মনিপুর কে কোন সুবিধা দেওয়া হতো না। কিন্তু এখন আপনাদের দোরগোড়ায় সারা ভারতকে আমি নিয়ে আসতে পেরেছি। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একটি পাহাড় কে মাউন্ট হ্যারীয়ট বলা হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওই পাহাড়ের নাম মাউন্ট মণিপুরে পরিবর্তন করব। পূর্ববর্তী সরকারগুলির শুধুমাত্র উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির জন্য একটি নীতি ছিল - উত্তর-পূর্ব দিকে তাকাবেন না। কিন্তু আমরা এই এলাকার জন্য নতুন উত্তর-পূর্ব আইন নীতি গ্রহণ করেছি।'

তার সাথেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ডবল ইঞ্জিন সরকারের প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীদের আক্রমণ করে বললেন, 'আমাদের মনে রাখা উচিত কিভাবে আগের সরকারগুলি মনিপুরকে একটা স্ট্রাইক স্টেট বানিয়ে রেখেছিল। কিভাবে আগের সরকারগুলি জনসাধারণের ঐক্য ভাঙার রাজনীতি তৈরি করেছিল। ডবল ইঞ্জিন সরকারের প্রচেষ্টা নিশ্চিত করেছে, এখন মণিপুরে জঙ্গিবাদ এবং নিরাপত্তাহীনতার আগুন নেই। এখন আছে শুধু শান্তি এবং উন্নয়ন। আজ ভারত বিপুল পরিমাণ পাম তেল আমদানি করছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। আমরা চাইছি ভারত আরো আত্মনির্ভর হয়ে উঠুক। আমরা ১১ হাজার কোটি টাকার পাম অয়েল মিশন নিয়ে এসেছি যা উত্তর পূর্ব ভারতের কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। অবরুদ্ধ রাজ্য থেকে এখন মনিপুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পথে রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে। আমাদের সরকার পাহাড় এবং উপত্যকার মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য গো টু হিলস এবং গো টু ভিলেজ নামের দুটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।' প্রধানমন্ত্রী বললেন, বিগত কয়েক বছরে মনিপুর একেবারে উন্নতির শিখরে পৌঁছে গিয়েছে।
আজকের ভাষণ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরো বললেন, "মনিপুরের একাধিক জায়গায় উন্নতি সাধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৮০ হাজার বাড়ি অনুমোদিত হয়েছে। ৪ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। ১.৫ লক্ষ্য বিনামূল্যে গ্যাস দেওয়া হয়েছে। ১.৩ লক্ষ বাড়িতে বিনামূল্যে ইলেকট্রিসিটি কানেকশন দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত মিশন এর অধীনে ৩০,০০০ বাড়িতে পাকা শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ৫.৩০ লক্ষ মানুষকে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে একদম বিনামূল্যে। মনিপুরের ছবি পাল্টাচ্ছে। কাজ করছে ডবল ইঞ্জিন সরকার।"
তবে শুধুমাত্র ভোট প্রচার নয়, আজকের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি ১,৮৫০ কোটি টাকার ১৩টি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন। এছাড়াও নয়টি আরো প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই নয়টি প্রকল্পের জন্য ভারত সরকারের তরফ থেকে ২,৯৫০ কোটি টাকা খরচ করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। সড়ক পরিবহন, পানীয় জলের ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য, নগর উন্নয়ন, ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং আরো বিভিন্ন সেক্টরে একাধিক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। এছাড়াও আজকের সভা থেকে পাঁচটি জাতীয় সড়কের প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যার জন্য খরচ হবে ১,৭০০ কোটি টাকা। ১১০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে এই দীর্ঘ জাতীয় সড়ক।