৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
দেশ

মোদির বেশকিছু ভুল সিদ্ধান্তেই আজ করোনার আঁতুড়ঘর ভারত, দেশে বিদেশে নিন্দার ঝড়

আন্তর্জাতিক প্রতিটি মিডিয়ার ছত্রে ছত্রে মোদির নীতির বিরোধিতা, স্লোগান একটাই, মোদিই এনেছেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
modi vaccine time.com quote Bengali News
নরেন্দ্র মোদি

ভারতবর্ষে প্রত্যেকদিনের করোনা ভাইরাসের কেস সংখ্যা এবং মৃত্যুসংখ্যা দেখলে সত্যিই শিওরে ওঠার মত অবস্থা। সারা ভারতে বর্তমানে প্রত্যেকদিন ২ লক্ষের বেশি করোনাভাইরাস কেস রিপোর্ট করা হচ্ছে, এবং তার সঙ্গেই প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে ৪,০০০ জনের। যদিও এই সংখ্যাগুলি অফিশিয়াল। বিশ্বের অনেকেই মনে করছেন ভারতে করোনা ভাইরাসের কেসের সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তার সঙ্গেই অভিযোগ উঠছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন তিনি এমন সমস্ত দেশে ভ্যাকসিন পাঠাতে চলেছেন যেগুলির বর্তমানে অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। অবশ্যই ভারত এই তালিকার বেশ ওপরের দিকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ১০ লক্ষের বেশি ভারতীয় এই মারন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবেন।

এখানে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়, ভারত কিন্তু খুব কম সময়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে করোনা কবলিত দেশে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম TIME.COM এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে হাতে এই ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা (ক্রাইসিস) তৈরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রয়োজনের সময় ভ্যাকসিন না কিনে এখন হা হুতাশ করে চলেছেন। TIME এর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের অস্তিত্বকে জাহির করার জন্য এবং ভারতের অদ্ভুত টিকাকরণ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ভারতকে আরো সমস্যার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। তার পাশাপাশি যে সমস্ত দেশ ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তারাও পড়েছে বেশ সমস্যায়। ইতিমধ্যেই ভারত অন্য দেশকে ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কারণ, তারা মনে করছেন এই মুহূর্তে দেশের মানুষের ভ্যাক্সিনেশন আগে প্রয়োজন, যেটা একটু আগে বুঝলে ভালো হতো। কিন্তু এমন সময় বুঝলেন যেই সময়ে, এই পদক্ষেপ সারা বিশ্বব্যাপী ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গরিব দেশগুলিকে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যে এই COVAX প্রোগ্রাম নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ভারতের এই পদক্ষেপের পর সারা বিশ্ব নতুন করে করোনা প্যানডেমিকের প্রহর গুনতে পারে।

adar poonawala Bengali News
আদর পুনাওয়ালা twitter@adarpoonawala

TIME বলছে, দরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভ্যাকসিন ক্রয় করেননি। বিশ্বের সমস্ত দেশের নায়কদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন অগ্রগামী যিনি ২০২০ সালের আগস্ট মাসে নিজেদের ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এ প্রোগ্রাম চালু করতে করতে সময় লেগে গিয়েছিল জানুয়ারী ২০২১। এতটা সময় কোথায় লেগে গেল সেটা ঠিক পরিষ্কার নয়। যাইহোক, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তেমন একটা বেশি পরিমাণে ভ্যাকসিন ক্রয় করেননি। শুধুমাত্র এই কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হঠকারিতার বশে ভারতে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। ভারতের অগ্রণী ভ্যাকসিন নির্মাতা কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট জানিয়ে দিয়েছে তারা মার্চ মাস থেকে ভ্যাকসিনের সাপ্লাই বন্ধ করছে এবং এই বছরের শেষের দিকে আবার তারা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করতে পারে। ঘরে বাইরে প্রচণ্ড চাপের কারণে সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদার পুনেওয়ালা লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন দিনকতক আগে।

৯২টি নিম্নআয়ের এবং অত্যন্ত নিম্ন আয়ের দেশ নির্ভর করছে ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোর উপরে। এই পরিস্থিতিতে যদি সেরাম ইনস্টিটিউট শুধুমাত্র ভারতকে ভ্যাকসিন দিয়ে বাকি দেশগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিনেশন বন্ধ করে দেয় তাহলে সারাবিশ্বে বিশাল একটা ভ্যাকসিনের ক্রাইসিস তৈরি হবে। জুন মাসের মধ্যেই সারা বিশ্বে এই ক্রাইসিস পৌঁছাবে ১৯০ মিলিয়ন ডোজে। ভারতের আশেপাশের দেশ বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলংকার হাতেও তেমন কিছু ভ্যাকসিন নেই। পয়লা এপ্রিল নেপালে যেখানে মাত্র ১৫২ টি নতুন কেস ধরা পড়েছিল সেখানে এখন প্রত্যেকদিন কেসের সংখ্যা হচ্ছে ৮,০০০। কিন্তু ভারতের যেহেতু চাহিদা তৈরি হচ্ছে তাই সেরাম ইনস্টিটিউট এই সমস্ত দেশকে ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত বাইরের দেশের জন্য ভারত অনেক বেশি ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে যেখানে তারা নিজেদের দেশের মানুষের জন্য ভ্যাক্সিনেশন ভালো করে শুরুই করেনি। উপর থেকে বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে মান-মর্যাদা পেলেও আদতে কিন্তু ভারতের ভ্যাকসিনেশনের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল এই সিদ্ধান্ত।

pune serum institute Bengali News
lab seruminstitute.com

ভারতের সবথেকে বড় ভ্যাকসিন নির্মাতা কোম্পানি হওয়া সত্বেও সেরাম ইনস্টিটিউট ভারতের থেকে তেমন কোনো সাহায্য পায়নি। বাইরের দেশের অন্যান্য সাহায্যকারী এবং পুনেওয়ালা নিজে এই ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যখন ভারতে ভ্যাক্সিনেশন শুরু হয় তখন ভারত সরকার সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে মাত্র ১১ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ক্রয় করে, যেখানে ভারত বায়োটেকের থেকে ক্রয় করা হয় ৫.৫ মিলিয়ন। ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছে ২১ মিলিয়ন ডোজ অর্ডার করে। তারপর ১১০ মিলিয়ন অর্ডার করা হয় মার্চ মাসে, যখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ একেবারে পুরো মাত্রায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করেছে। এপ্রিল মাসে ১.৪ বিলিয়ান ভ্যাকসিনের ডোজ অর্ডার করা হয় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। শুধুমাত্র ভারতের পক্ষ থেকে এত বড় একটি অর্ডার পাওয়ায় প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে যান সেরাম কর্তা। এত পরিমান ভ্যাকসিন এতটা কম সময়ের মধ্যে উৎপাদন করা কিন্তু সম্ভব নয়। তাই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আগে নিজেদের দেখো পরে অন্যদের। কানাডাসহ বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলি তার আগেই তাদের মানুষদের জন্য বেশি করে ভ্যাকসিন কিনে রেখেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই সেখানকার পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে অর্ধেককে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে গিয়েছে।

শুধুমাত্র এটুকুতেই ক্ষান্ত নয়, মোদি সরকারের অদ্ভুত ভ্যাকসিন পলিসির জন্য সারাদেশ বর্তমানে সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছে। মোদি সরকার ঘোষণা করে দিয়েছে এবার রাজ্য সরকারগুলি নিজেদের মতো ভ্যাকসিন কিনতে পারবে। এর ফলে বিশ্ব মার্কেট অনেকটা খুলে গিয়েছে। বিশ্বের ভ্যাকসিন নির্মাতারা তাদের ইচ্ছামত দামে রাজ্য সরকারকে ভ্যাকসিন বিক্রি করতে পারছে। তার মধ্যে কিছু কিছু রাজ্য সরকার এবং সাথে সাথে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করছে পাবলিক হাসপাতালে আবার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ভারত হলো বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে জীবনদায়ী ভ্যাকসিন বিক্রি করা হয় ওপেন মার্কেটে, তাও আবার লাগামছাড়া দামে। এর ফলে রাজ্য সরকারের কাছে ভ্যাকসিনের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।

তার পাশাপাশি মোদি সরকার ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের ভ্যাক্সিনেশন করানোর জন্য একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার করছে যার নাম কো-উইন। ভারত সরকার বর্তমানে ভেবে নিয়েছে, ভারতের সমস্ত মানুষ টেকনোলজি বোঝেন, সকলে ভালো পড়াশোনা করেছেন এবং সকলে দুর্দান্তভাবে স্মার্টফোন চালাতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই সে কথা বলে না। ভারতে এমন বহু মানুষ আছেন যারা স্মার্টফোন তো দূরে থাক, সাধারন ফিচার ফোনটুকু ঠিকঠাকভাবে চালাতে পারেন না। এইরকম একটি দেশে একটি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ভ্যাক্সিনেশনের টাইম স্লট বুকিং অত্যন্ত হঠকারী একটি সিদ্ধান্ত। অনেকেই এই সিদ্ধান্তের ফলে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রকারান্তরে 'স্মার্ট' মানুষদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না তো? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একাধিক ভুল সিদ্ধান্তের জন্য শুধু ভারত নিজে নয় ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকা অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো সমস্যার মুখে পড়েছে।

দেশে বিদেশে বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়া করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পিঠ বাঁচানোর জন্য বিজেপি নেতারা মনগড়া কিছু বিদেশী দৈনিকের নাম ভেবে নিয়ে আসছেন, এবং সেখানে মোদীর নামে মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছেন, যেগুলি আদৌ অস্তিত্বই রাখে না। কিন্তু, যারা সত্যিই পড়াশোনা করেছেন এবং যারা টেকনোলজিটা একটু হলেও বোঝেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাঁওতা ধরে ফেলাটা খুব একটা শক্ত কাজ নয়। ঘরে বাইরে সব জায়গায় মোদীর নামে নিন্দা। বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশ মোদির ভূমিকা নিয়ে তুলছে প্রশ্ন। বিজেপি নেতা ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত বলছেন, করোনা যেহেতু একটি জীবন্ত জিনিস, তাই আমাদের মতই তারও বেঁচে থাকার অধিকার আছে! অন্যান্য বিজেপি নেতারা করোনা মারতে গোমূত্রের দাওয়াই দিচ্ছেন, যেগুলি একেবারেই কার্যকরী না। সারাবিশ্বে মোদি একেবারেই কোণঠাসা, কিন্তু তবুও কিছু ভারতবাসী এখনো মোদীকেই সমর্থন করে তার ৫৬ ইঞ্চির ছাতি আরো চওড়া করার জন্য গর্বের সঙ্গে স্লোগান দিচ্ছেন "জয় শ্রীরাম"।

আরও খবর

বিজ্ঞাপন দিন

[email protected]

২৩ ফেব্রুয়ারি

বাংলা থেকে আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

Narendra Modi
১১ ফেব্রুয়ারি

নির্বাচনের আগে তাৎপর্যপূর্ণ সফর

Narendra Modi
১০ সেপ্টেম্বর

জি ২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষ্যে ভারতে এসেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, সঙ্গে ছিলেন তাঁর পুত্র

Justin Trudeau and narendra modi
১০ আগস্ট

এই ছুটি মা কিংবা বাবা টানা ৭৩০ দিন অর্থাৎ দুই বছর নিতে পারবেনা, রয়েছে নিয়ম

new born child
২৭ জুলাই

যুবতীকে ভর্তি করানো হয়েছে স্থানীয় একটি হাসপাতালে

rape fear woman attacked torture
৯ জুলাই

সোহিনী সরকার মানেই সমাজের অচলায়তনের তোয়াক্কা না করেই স্বাধীনচেতা মনোভাব

Sohini Sarkar US
৩০ মে

বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাঁরা

Wrestler protest
২৮ মে

আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের পুরীর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়

Puri Jagannath temple
২৮ মার্চ

সিঙ্গুরে আট একর জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কাজ এপ্রিলের মধ্যেই শেষ হবে

Modi Mamata new 2
১৩ মার্চ

সেরা স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’

Narendra Modi
২৬ ফেব্রুয়ারি

সকল জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে

bird flu checken hen
২৭ নভেম্বর

"এনারা নাকি বিজেপির মুখ!" কটাক্ষ কুণাল ঘোষের

Narendra Modi
২৩ নভেম্বর

শপথ গ্রহণ পর্ব মিটতেই সস্ত্রীক রাজ্যপাল রেড রোডে গিয়ে নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করেন

CV Ananda bose