‘তিনি গেছেন যেথায় মাটি ভেঙে করছে চাষা চাষ/ পাথর ভেঙে কাটছে যেথায় পথ, খাটছে বারোমাস’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই কবিতার এই লাইনদুটিই বুঝিয়ে দেয়, ভগবান সবার কাছে এবং সবার মাঝে। তাঁকে পাওয়ার জন্য আলাদা করে কোনও জাত-ধর্ম-পেশাকে অবলম্বন করতে হয় না। তবে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে আসে যা দেখে মন বলে, একবিংশ শতকের আধুনিকতা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে নিজেদের হাতের মুঠোয় করার পরেও অধিকাংশ মানুষই মানসিকভাবে এখনও পড়ে আছে মধ্যযুগের অন্ধকারেই। আবারও এরকমই একটি ঘটনার প্রমান পাওয়া গেল কর্ণাটকে।
ঘটনার সুত্রপাত কর্ণাটকের কোপ্পাল জেলার মিয়াপুর গ্রামে। গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর দু’বছরের শিশুটির জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার পরিবার স্থানীয় একটি মন্দিরে পুজা দিতে গেছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, যখন শিশুটির বাবা মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছিলেন, তখন শিশুটি দৌড়াতে দৌড়াতে মন্দিরে ঢুকে যায়। আর সেই ঘটনা ঘিরেই বিপাকের উৎপত্তি।
ঘটনার পরেই স্থানীয় ‘উচ্চ সম্প্রদায়ের’ সদস্যরা রে রে করে ওঠেন। মন্দিরের পুরোহিতের আহ্বানে ১১ই সেপ্টেম্বর তাঁরা জরুরি মিটিং ডাকেন এবং সেখানেই ঠিক হয়, মন্দিরে যেহেতু দলিতের পা পড়েছে তাই হোম-যজ্ঞ করে মন্দিরকে ফের পরিশুদ্ধ করতে হবে। খরচাপাতি বাবদ শিশুটির পরিবারের কাছ থেকে চাওয়া হয় ২৫,০০০ টাকা।
উচ্চ সম্প্রদায়ের এমন নির্দেশ শুনেই অর্থ দিতে অপারগ শিশুটির বাবা দ্বারস্থ হন প্রশাসনের। তাঁর কথা শুনে কোপ্পাল জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরাই দুপক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং কোনও মানুষের সাথে এমন ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে, সেজন্য উচ্চ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সতর্ক করেন তাঁরা।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোপ্পাল থানার পুলিশ জানিয়েছে, দলিত পরিবারটি চান্নাদাসার সম্প্রদায়ভুক্ত। উচ্চ সম্প্রদায় গরিষ্ঠ গ্রামটিতে এই সম্প্রদায়ের মাত্র তিনটি পরিবারই আছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যাহত হতে পারে ভেবে শিশুটির পরিবার কারোর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানায়নি।