মাতৃত্ব নয়, বরং ধনী-গরিবের বৈষম্যই সারোগেসি, প্রশ্ন তুললেন তসলিমা নাসরিন
"সারোগেসি ততদিন টিকে থাকবে, যতদিন সমাজে দারিদ্র টিকে থাকবে" তসলিমা নাসরিন
সারোগেসির মাধ্যমে 'মা' হওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই এই পদ্ধতির দৌলতে বহু নারী মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন। সম্প্রতি অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া (Priyanka Chopra) সারোগেসির মাধ্যমে মা হয়েছেন। নিজের ইনস্টা পেজে সেই সুখবর সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। কিন্তু সারোগেসির এই বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তুললেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)। নিজের ফেসবুক পেজে তুলে ধরেছেন এমনই কিছু চাঞ্চল্যকর কথা।
লেখিকা তসলিমা নাসরিন সারোগেসিকে দারিদ্রের নিক্তিতে ওজন করেছেন। তিনি বলেছেন, "সারোগেসি ততদিন টিকে থাকবে, যতদিন সমাজে দারিদ্র টিকে থাকবে।" ধনী-দরিদ্রের যে মৌল পার্থক্য সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে বিদ্যমান, তেমনই এই সারোগেসি মাধ্যমে মা হওয়ার ঘটনাটিকেও তিনি এই দৃষ্টিকোণে বিচার করেছেন। বলেছেন, "দরিদ্র মেয়েদের জরায়ু টাকার বিনিময়ে ন'মাসের জন্য ভাড়া নেয় ধনীরা। ধনী মেয়েরা কিন্তু তাদের জরায়ু কাউকে ভাড়া দেবে না। কারণ গর্ভাবস্থায় জীবনের নানা ঝুঁকি থাকে, শিশুর জন্মের সময়ও থাকে ঝুঁকি। দরিদ্র না হলে কেউ এই ঝুঁকি নেয় না।"
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কত অনাথ শিশুর ভিড়। পিতা-মাতাহীন এই শিশুদের মাতৃত্বের স্বাদ তো দূরে থাকুক, বেঁচে থাকার উপায়টুকুও থাকে না। সেখানে বহু সেলিব্রেটি 'দত্তক' নেওয়ার বদলে এই সারোগেসি মা হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এই মানসিকতা নিয়ে লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেছেন, "গৃহহীন স্বজনহীন কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়ার চেয়ে সারোগেসির মাধ্যমে ধনী এবং ব্যস্ত সেলিব্রিটিরা নিজের জিনসমেত একখানা রেডিমেড শিশু চায়। মানুষের ভেতরে এই সেলফিস জিনটি, এই নার্সিসিস্টিক ইগোটি বেশ আছে। এসবের ঊর্ধ্বে উঠতে কেউ যে পারে না তা নয়, অনেকে গর্ভবতী হতে, সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হলেও সন্তান জন্ম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।"
সারোগেসি এই ধারণার মধ্যে যে অর্থনৈতিক লেনদেনের যোগাযোগ রয়েছে, তার সঙ্গে মাতৃত্বের আবেদন কি সত্যিই ক্ষণস্থায়ী? এমনই প্রশ্ন তুলেছেন লেখিকা। বলেছেন, "সারোগেসিকে তখন মেনে নেবো যখন শুধু দরিদ্র নয়, ধনী মেয়েরাও সারোগেট মা হবে, টাকার বিনিময়ে নয়, সারোগেসিকে ভালোবেসে হবে। ঠিক যেমন বোরখাকে মেনে নেবো, যখন পুরুষেরা ভালোবেসে বোরখা পরবে। মেয়েদের পতিতালয়কে মেনে নেবো, যখন পুরুষেরা নিজেদের পতিত-আলয় গড়ে তুলবে, মুখে মেকআপ করে রাস্তায় ত্রিভঙ্গ দাঁড়িয়ে কুড়ি-পঁচিশ টাকা পেতে নারী-খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করবে।"