ভুয়ো ভ্যাকসিন গ্রহণ করে কেমন আছেন মিমি চক্রবর্তী, জানালেন শারীরিক অবস্থার কথা
সাথেই জানা গেলো সেই পাউডারে কি মেশানো ছিল আদতে
ভুয়ো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন খোদ যাদবপুরের সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। বুধবারের খবর সামনে আসার পর থেকেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নেট দুনিয়ায়। সকলেই মিমির সুস্থতা কামনা করে বারংবার টুইট করেছেন এবং অনেকে তাকে ফোন করে তার স্বাস্থ্যের কথা জানতে চেয়েছেন। মঙ্গলবার কসবার একটি ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পে হাজির হয়ে করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেছিলেন মিমি চক্রবর্তী। কিন্তু তারপরে যখন তার ফোনে কোন মেসেজ আসে না এবং তাকে কোনরকম ভ্যাকসিনেশনের সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না তারপর থেকেই তার খটকা লাগে এবং খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন ওই ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্প সম্পূর্ণরূপে ভুয়ো। তারপর এই এই ভ্যাক্সিনেশন গোটা চক্রের মূল পান্ডা দেবাঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন মিমি চক্রবর্তী। তিনি জানতে পারেন ওই টিকার কোন ভায়ালে কোনরকম ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট এবং এক্সপায়ারি ডেট ছিল না। তার সাথেই, জানা গিয়েছে ওই টিকায় পাউডারের সঙ্গে জল মেশানো কোন একটি তরল পদার্থ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন হিসেবে দেওয়া হচ্ছিল।
তারপরেই একটি ইনস্টাগ্রাম লাইভ করে মিমি চক্রবর্তী সকলের উদ্দেশ্যে তার বার্তা জানান। তিনি বলেন, " আমি একদম সুস্থ রয়েছি আপনারা সকলে আমাকে মেসেজ করছেন এর জন্য ধন্যবাদ। তবে আমি যখন সুস্থ আছি আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। অকারনে কোন প্যানিক করবেন না। আমার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে এবং ইতিমধ্যেই ওই স্যাম্পেল পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।ওই টিকা হিসেবে কি দেওয়া হয়েছিল সেটা পরীক্ষা করার পর আমরা জানতে পারবো। তবে আমার মনে হয়, ওখানে কোন ক্ষতিকারক পদার্থ ছিল না তবে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে ওখানে করোনার টিকা ছিল না। কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আমাদের ল্যাবের টেস্ট রিপোর্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।"
জানা যায় দেবাঞ্জন শুধুমাত্র কসবা নয় এর আগেও বেশ কিছু জায়গায় এরকম ভুয়া ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পেইন করেছে। সম্প্রতি পাওয়া রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, কসবার অফিসে কিছুদিন আগে স্পুটনিক' ভি ভ্যাকসিন দিয়েছিল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন। তবে যেখানে সরকারের কাছেই ওই ভ্যাকসিন নেই সেখানে দেবাঞ্জন কিভাবে ওই ভ্যাকসিন দিয়ে দিলো সেটা এখনো পর্যন্ত জানা যাচ্ছে না। তবে মনে করা হচ্ছে ওই ভ্যাকসিন কোন ভাবেই স্পুটনিক' ভি ছিলনা। এরকম ভাবেই কোন একটি পাউডার জলে গুলে দিয়েছিল সে। এছাড়াও নর্থ সিটি কলেজে তিনজন পড়ুয়াকে স্পুটনিক' ভ্যাকসিন দিয়েছে দেবাঞ্জন।
দেবাঞ্জন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ সে আইএএস অফিসার পরিচয় দিয়ে ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প চালায়। জানা যাচ্ছে, ১৮ জুন নর্থ সিটি কলেজে একটি টিকাকরণ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছিল দেবাঞ্জন। সেখানে বেশ কয়েকজন পড়ুয়াকে তিনি স্পুটনিক' ভ্যাকসিন দিতে বলেছিলেন। কিন্তু তারপরে পড়ুয়ারা কোভিশিল্ড এবং কো ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানায়। তারপরে দেবাঞ্জন এর মধ্যে একটি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে। ইতিমধ্যেই তদন্তকারী আধিকারিকরা বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন যারা এই টিকা গ্রহণ করেছিলেন। তার পাশাপাশি এখনো পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছে দেবাঞ্জন কিভাবে ভুয়ো টিকাকরণ শিবিরের আয়োজন করল। জানা গিয়েছে, এই ভ্যাকসিন সম্পূর্ণরূপে জাল ভ্যাকসিন এবং এই ভ্যাকসিন এর সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিনের দূর দূর পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই।
ইতিমধ্যেই ভিডিওবার্তায় মিমি চক্রবর্তী সকলকে জানিয়েছেন যেন, যারা যারা দেবাঞ্জন এর ভ্যাকসিন ক্যাম্প থেকে ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা যেন অতি তাড়াতাড়ি কেএমসি এবং স্থানীয় বিধায়ক এবং কাউন্সিলদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। অন্যদিকে, জানা যাচ্ছে, কসবার ওই ক্যাম্পে করোনা ভাইরাসের টিকা তো নয় বরং দেওয়া হয়েছিল অ্যামিকাসিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক এর ওষুধ যেটা ব্যবহার করা হয় পেটের সমস্যার চিকিৎসার ক্ষেত্রে। মিমির আগেই পেটের সমস্যা ছিল, তাই তাকে এবারে ছুটে যেতে হচ্ছে হাসপাতলে। সূত্রের খবর অনুযায়ী আগামী শুক্রবার তিনি লিভার পরীক্ষা করাতে চলেছেন। এছাড়াও একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিমি চক্রবর্তী সকলের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন যারা যারা করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেছিলেন ওই কসবার ক্যাম্প থেকে তারা যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে ফেলেন। এই ওষুধ গ্রহণ করার পরে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি মিমি চক্রবর্তীর। কিন্তু তবুও, তিনি কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। ভিডিওবার্তায় তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেছেন, " আমরা বর্তমানে ভুক্তভোগী এবং আমাদের হাতে আর কিছু নেই। তাই যদি কোনো শারীরিক সমস্যা হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে ফেলুন। আমি চাই আপনারা সকলে সুস্থ থাকুন।"