মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট নিতে এসে চরম হয়রানির মুখে ছাত্রছাত্রীরা! অগ্নিগর্ভ কলকতা বিশ্ববিদ্যালয়
করোনাকালে উৎসবসম জমায়েত ও বিশৃঙ্খলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কেই দায়ী করেছে পড়ুয়ারা
অষ্টমীর রাতে লাইন দিয়ে কলকাতার থিমপুজো দেখার সাথে গুলিয়ে ফেললেও অত্যুক্তি হবেনা। বরং সেই উৎসবের আমেজে শৃঙ্খলা থাকে যা আজকের মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহের উৎসবে একেবারেই উধাও। হ্যাঁ, এমনই এক বিশৃঙ্খল দিন প্রত্যক্ষ করল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস। আর এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী ইউনিভার্সিটি, কার্যত এমনটাই ক্ষোভ উগরে দিয়েছে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা।
একটি ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন কোনো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত রেজিস্ট্রেশন নম্বর বাতিল করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয় পড়ুয়ারা। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট, যা পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপিল করার নির্দিষ্ট দিন পর সংগ্রহ করতে হয়। নতুন কলেজে ভর্তি নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রায় অধিকাংশই এপ্রিলের আগেই CU- থেকে পুরোনো রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে এবং মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট প্রাপ্তির জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া হয় প্রত্যেককে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে সিংহভাগ ছাত্রছাত্রীদের তা সংগ্রহ করা বাকি থেকে যায় কারণ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতোই করোনাকালে লকডাউন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। মাঝেমধ্যে কাজ হলেও তা ছিল অনিয়মিত। বারংবার বহু ছাত্রছাত্রী অভিযোগ করে, সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে অনেক সময়েই কাউকে না পেয়ে ফিরে আসতে হয়।
গত শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দেবাশীষ দাস জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্য সাতটা অবধি কাজ চালিয়ে প্রায় ৭০০ জন পড়ুয়াকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী ডেট হিসেবে আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার, ১৩ই জুলাই ছাত্রছাত্রীদের আসতে বলা হয়। একটি প্রথম সারির বাংলা দৈনিকে তা প্রকাশিতও হয়। আর সেই সূত্রেই আজ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জমায়েত হয় ছাত্রছাত্রীদের। দীর্ঘক্ষণ বাইরে চড়া রোদে লম্বা লাইনের পর গেট খোলায় হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে শ'য়ে শ'য়ে ছাত্রছাত্রী। সারিবদ্ধভাবে ও নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর কোনোরকম ব্যবস্থা না করেই সকলকে একসাথে ঢোকানো হয় ক্যাম্পাসে। ধাক্কাধাক্কি, মারামারি, চিৎকারের চোটে চরমে ওঠে ছাত্র অসন্তোষ। বচসা বাধে কর্তৃপক্ষের সাথেও। হাতাহাতিতে জড়ায় দু-পক্ষ। এত সংখ্যক পড়ুয়ার জমায়েত হবে জেনেও কেন পরপর বেশ কয়েকটি দিনকে ধার্য করা হলনা, প্রশ্ন ওঠে ছাত্রছাত্রীদের তরফ থেকে। করোনাবিধি শিকেয় তুলে প্রায় ৫ ঘন্টা ধরে এই প্রকার অপেক্ষা, জমায়েতের ফলবশত ঠেলাঠেলি, বেসামাল ধাক্কাধাক্কিতে চোট-আঘাত সহ্য করেও অনেকেকেই ফিরে যেতে হয় খালি হাতে। যদিও শেষে কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে অবশ্য ছাত্র হয়রানি সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নেরই কোনো সদুত্তর মেলেনি।