মেহেন্দি হাতেই উঠলো ছুরি কাঁচি, রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে দাম্পত্য জীবনে পা রাখলেন সার্জেন
এই অভূতপূর্ব কাণ্ড ঘটিয়েছেন শল্যচিকিৎসক ডাক্তার প্রিয়াংকা সাহা
মাত্র দুই ঘণ্টা পরেই মালাবদল কিন্তু তার আগেই কনের কাণ্ডে রীতিমতো তাক লেগে গেলো সবার। নতুন জীবনে প্রবেশ করার মাত্র ২ ঘণ্টা আগে বিউটি পার্লারে না গিয়ে মেহেন্দি লাগানো হাতে তিনি ছুটলেন হাসপাতালে। ছুরি কাঁচি চালিয়ে অপারেশন করলেন এক মুমূর্ষ ব্যক্তির। নতুন জীবনে প্রবেশ এর আগে হবু কনের হাতে নতুন জীবন ফিরে অসুস্থ অর্ণব মুখোপাধ্যায়। সার্জেন ডাক্তার প্রিয়াঙ্কা সাহার এই কাণ্ডে রীতিমতো তাকে গেছে অনেকের। সহকারি চিকিৎসকরা তার এই কাহিনী দেখে বলছেন, উমা শুধুমাত্র মূর্তিতে নেই, বরং অলি গলি থেকে রাজপথ, বাস, ট্রাম, ট্রেন, ট্যাক্সি, পাশের বাড়ি সব জায়গাতেই আছেন। একসাথে ১০ রকম কাজ সামলে আসছেন সেরকম মেয়ে আমরা প্রতিদিন দেখছি।
তবে এবারে এরকম একজন মেয়ের সন্ধান মিলল রানিকুঠি লায়ন্স হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি ছিলেন যন্ত্রশিল্পী অর্ণব মুখোপাধ্যায়। বছর চল্লিশের অর্ণব বাবুর পেটে বিশাল সাইজের একটি টিউমার। এটি আকারে অনেকটা ফুটবলের মত। চিকিৎসার পরিভাষায় এটাকে বলে রেট্রপেরিটোনাল সারকোমা। পেটের এই বিশাল টিউমারের সমস্যা নিয়ে প্রথমে ডাক্তার দীপঙ্কর সরকারকে দেখিয়েছিলেন অর্ণব মুখোপাধ্যায়। প্রকাণ্ড টিউমার পেট কেটে বের করা সহজ নয়। তাই তিনি সরাসরি রেফার করে দেন ডাক্তার মাখনলাল সাহার কাছে।
এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান এবং দক্ষ শল্যচিকিৎসক ডঃ মাখন লাল সাহা। তিনি বলছেন, "প্রথমটাই উনি নিজেও ধরতে পারেননি। পেট ভার ভার থাকতো। সব সময় বমি বমি ভাব। কিন্তু শেষ তিন চারমাস অবস্থা অত্যন্ত সাংঘাতিক।" অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই অস্ত্রোপচারের জন্য রোগী রাজি হতেই শুরু হয় অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি। কিন্তু বিয়ের সকাল হলেও মেয়ের আবদার ছিল সে তার বাবাকে সাহায্য করবে অস্ত্রোপচারে। কিন্তু ডাক্তার মাখনলাল সাহা তার মেয়েকে বললেন, "তোমায় আসতে হবে না।" কিন্তু তবুও কনেকে আটকানো সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের পর পেট কেটে বের করা হয়েছে ১০ কেজি ওজনের একটি টিউমার। অস্ত্রোপচার শেষে দক্ষিণ কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারের একটি অভিজাত হোটেলের পথে কনের গাড়ি রওনা দিল। মেয়ের এই কর্মকান্ড দেখে ডাক্তার মাখন লাল সাহা বলছেন, প্রতিটি মেয়ে দশভূজা। তারা অবলীলাক্রমে সংসার থেকে কর্মক্ষেত্র সবকিছু সামলাচ্ছেন। এরকম মেয়েরাই সত্যিকারের দুর্গা।