"ইচ্ছে ছিল একটা চায়ের দোকান" বাবার ইচ্ছেপূরণ করলেন অভিনেত্রী কন্যা
অভিনেত্রী বিনীতা গুহ ছক ভেঙে গড়লেন নজির
মেয়ের দিনের একটা বড় সময় কাটে 'লাইট, ক্যামেরা ও অ্যাকশন'-এর দুনিয়ায়। ঝাঁ চকচকে গ্ল্যামারের মোড়কে দিনযাপনের রোজনামচা লেখে বছর আঠাশের কন্যাটি। স্বপ্ন তার বিশাল বড় হোর্ডিং-এ বড়পর্দায় অভিনয়। এদিকে বাড়ির মানুষদের ইচ্ছেপূরণ তো আছেই! সামর্থ্য অল্প হলেও ইচ্ছে শক্তির বিশাল পুঁজি নিয়ে তাই লেগে পড়তে দেখা গেল তাঁকে। নিজের স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি বাবার ইচ্ছেপূরণ করলেন এই তরুণী। ছকভাঙা জীবনের বাইরে গিয়ে গড়লেন এক নতুন সমীকরণ। তরুণীর এই স্বপ্নপূরণ আগামী প্রজন্মের কাছে নতুন দিশা দেখাবেই।
লকডাউনের সময় কাজ হারান যাদবপুরের বাসিন্দা বছর ৬৫-র সুখেন গুহ। এতবড় সংসারের হাল ধরেন কন্যা বিনীতা গুহ। অভিনয় জগতে থেকেও তাঁর বারবার মনে হয়েছে যদি বাবার জন্য একটা অন্তত চায়ের দোকান করে দেওয়া যায়। সংসারের দায়িত্ব তো মেয়েই সামলাচ্ছেন, কিন্তু কর্ম হারানো বাবার পাশে থাকতে কেবল আর্থিক সাহায্যই তো প্রধান নয়, বরং দরকার বাবার আত্মবিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? অনেক অপেক্ষার পর অল্প পুঁজিতেই মেয়ে বাবাকে খুলে দিলেন চায়ের দোকান। শুরু হয়েছে ৬৫ বছরেও বাবার স্বাবলম্বী থাকার পথচলা।
টলিউডের অভিনেত্রী বিনীতা গুহ এমনই ছকভাঙা সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। নিজের পড়াশোনার খরচটাও তাঁকে নিজেই সংগ্রহ করতে হত। বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্মে কাজ করেও স্বপ্ন দেখতে ভোলেননি বিনীতা। পরিবারের পাশে থাকা, আবার নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য কঠোর সংগ্রাম - যুগপৎ লড়াইয়ে সমান তালে এগিয়েছেন বিনীতা। এখন টলিউডে কাজ করছেন। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও ওয়েবসিরিজে কাজও করছেন। সেই সঙ্গে বাবার ইচ্ছেপূরণের জন্য গড়ে দিলেন একটি 'টী স্টল'। আর নিজের স্যোসাল মিডিয়া পেজে লিখলেন গর্বের সঙ্গে, "ইনি আমার বাবা। বয়স ৬৫। জীবনে খুব ইচ্ছে ছিল একটা চায়ের দোকান করবে। তার কাছে কোনো কাজ নেই গত বছর লকডাউনের সময় থেকেই। আমি অভিনয় করি। তেমন কিছুই তো করতে পারি না। অনেক কষ্টে বাবার এই ছোট্ট ইচ্ছেটুকু পূরণ করার চেষ্টা করলাম।" এরপরেই সকলকেই বিনীতা জানালেন আমন্ত্রণ, "এখানে চা, ক্লাব কচুড়ি, মুড়ি ঘুগনি পাওয়া যায়। এই জায়গাটি যাদবপুরে শক্তিগড়ের মাঠের কাছে। সকলকে সাদর আমন্ত্রণ।"
বিনীতার এই ডাকে সাড়া দিয়েছেন অনেকেই। জানিয়েছেন সুখেন বাবুর এই দোকানে আসার কথা। আর বিনীতার এই ছকভাঙা সিদ্ধান্তকে অনেকেই জানিয়েছেন কুর্নিশ। অনেকেই বলেছেন, কেবল আর্থিক সাহায্য দিয়েই বাবা-মায়ের পাশে থাকা নয়, উচিত একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত তাঁদের আত্মবিশ্বাসটা বজায় রাখা, স্বাবলম্বী করে রাখা। গ্ল্যামার দুনিয়ায় বিনীতাকে হয়তো শুনতে হবে 'চাওয়ালার মেয়ে', তবে আধুনিক পৃথিবীতে বৃদ্ধাশ্রমের চেয়ে স্বাবলম্বী পিতার হাস্যোজ্জ্বল মুখখানি বিনীতার কাছে অনেক বেশি মূল্যবান। বিনীতার এই সিদ্ধান্ত আগামী প্রজন্মের কাছে একটা নতুন বার্তা তো আনবেই বলছেন ওয়াকিবহাল মহল।