বাসে উঠলেই ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা, ক্ষোভ যাত্রীদের মধ্যে
করোনা আবহের মধ্যে সম্প্রতি শুরু হয়েছে বাস এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাড়া নিয়ে একটা সমস্যা
কলকাতার রাস্তায় শুরু হয়েছে কন্ডাক্টারদের দৌরাত্ম্য। করণা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পরে পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেছিলেন, বাস নামাতে পারবেন বাস মালিকরা। কিন্তু সেই সময়, বাস মালিক সংগঠনের দাবী ছিল, এরকম পরিস্থিতিতে যেখানে পেট্রোল-ডিজেলের দাম এতটা বেশি, সেখানে বাসের ভাড়া না বাড়িয়ে চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু তবুও বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করার দাবি এখনো জারি রেখেছে সমস্ত বাস মালিক সংগঠন। কিন্তু, কয়েক জায়গায় আবার বাসের ভাড়া নিয়ে অত্যাধিক দৌরাত্ম্য শুরু করেছেন বাসের কনডাক্টররা। অভিযোগ উঠেছে এমন কিছু বাস রয়েছে যারা হাওড়া স্টেশন থেকে ব্রিজ পার করিয়ে বড়বাজার নামাতে যাত্রীর থেকে ১৫ টাকা ভাড়া নিয়েছে।
গত বছর যখন লকডাউন হয়েছিল তারপরে যখন বাস চালানো শুরু হল তখন প্রথম ধাপে ভাড়া করে দেওয়া হয়েছিল ১০ টাকা। তারপরে ২টাকা করে চার কিলোমিটার অন্তর ভাড়া বাড়তো। কিন্তু এখন থেকে আবার বেশ কিছু রুট শুরুতে ১৫ টাকা ভাড়া নিয়ে বাস চালানো শুরু করছে। প্রতি চার কিলোমিটার অন্তর ভাড়া বাড়ছে ৫ টাকা করে। ফলে ১৬ কিলোমিটার যেতে, ভাড়া চলে যাচ্ছে ৩৫ টাকা, যেখানে ওই ভাড়া ছিল ১২ টাকা। তবে সেটা হচ্ছে কিছু কিছু রুট এর ক্ষেত্রে, কয়েকটি রুট সর্বনিম্ন ভাড়া নিচ্ছে ১০ টাকা। তবে সে ক্ষেত্রে ১৬ কিলোমিটারে বাসের ভাড়া দাঁড়াচ্ছে ৩০ টাকা।
এই নিয়ে পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বেশ বিরক্ত। যাত্রীরা দাবি করছে সরকার ভাড়া ঠিক না করে দিলে যা খুশি ভাড়া নিয়ে নিয়েছে বাস চালক এবং কন্ডাকটররা। অথচ বাস ঠিকঠাক সময় পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, "এরকম ভাবে বাড়তি ভাড়া নেওয়া বেআইনি। সাধারণ মানুষের সমস্যার মধ্যে রয়েছ, তার মধ্যে এতটা বাড়তি ভাড়া না নিতে বাস মালিক সংগঠনকে আমি অনুরোধ করব।" বাস মালিকদের বক্তব্য, ডিজেলের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে আগের ভাড়ায় বাস চালানো সম্ভব নয়। বেশি ভাড়া না নিলে বাস নামবে না। কিন্তু প্রথম ধাপে ১৫টাকা নেওয়া একেবারেই ঠিক নয়। রাস্তায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা অত্যন্ত কমে গেছে এবং এই পরিস্থিতিতে যে সমস্ত বাস চলছে তারা অত্যধিক ভাড়া হাঁকাচ্ছে। সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে বাসের ভাড়া বাড়ায়নি সরকার কিন্তু বাস মালিকদের সুবিধায় মুকুব করা হয়েছে রোড ট্যাক্স। কিন্তু রাস্তায় যে পরিবহন ব্যবস্থার হাল তাতে খুব কম সংখ্যক বাস নামছে রাস্তায়। আর যে কয়টা বাস নামছে তারা অত্যধিক ভাড়া চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
সাধারণত হাওড়া থেকে যে সমস্ত বাস ছাড়ছে সেই খানে ১৫ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে প্রথম ধাপে। সেই ভাড়া না হলে নেমে যেতে বলা হচ্ছে বাস থেকে। এল২৩৮, ধর্মতলা-বারাসাত-কল্যাণী, এবং ধর্মতলা-বসিরহাট রুটে এই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অন্য দিকে যে বাসগুলো সলপ এবং ডানকুনির দিক থেকে এসে সেক্টর ফাইভের দিকে বেরিয়ে যায় সেই সমস্ত বাসে ১৫ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও এই সমস্ত বাসের ভাড়াটা একটু বেশি থাকে চিরকাল। আদতে যে সমস্ত বাসে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে সেই সমস্ত বাসের রুট পারমিট অন্যরকম, তাই তারা এরকম ভাড়া হাঁকাতে পারেন।
এই প্রসঙ্গে, জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বার সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, " এভাবে সরকারি নির্দেশিকা ছাড়া বাসের বাড়তি ভাড়া নেওয়া বেআইনি। আমরা চাই সরকার একটা ভাড়া বৃদ্ধি করে একটা নির্দিষ্ট ভাড়া ঠিক করে দিক, যাতে মানুষ এবং কন্ডাকটর দের মধ্যে এরকম ভুল বোঝাবুঝি বন্ধ হয়। গত বছরেই বেশি ভাড়া নিয়ে বিস্তর সমস্যা হয়ে গিয়েছে।" অন্যদিকে ওয়েস্টবেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বোস বলেছেন, " কোথাও কোথাও সাত টাকার ভাড়া অনুদান হিসেবে ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একেবারে ১৫ টাকা ভাড়া নেওয়া কোন ভাবে ঠিক নয়। হয়তো যে সমস্ত বাসে এসটিএ পারমিট আছে তারা এটা করছে। এই সমস্ত বাসে এমনিতে ভাড়া বেশি, আর তাদের ভাড়ার উপরে সরকার কিংবা বাস মালিক সংগঠনের তেমন একটা হাত থাকে না। তাই তারা হয়তো নিজেদের সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে।"