"মাকে কষ্ট দিয়ে বাড়ি ছেড়ে কমরেড হয়েছিলাম", রাজনৈতিক জীবনের শেষবেলায় স্মৃতিরোমন্থন বিমান বসুর
বয়সের কারণে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ ছাড়লেন বিমান বসু
নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে সংগ্রাম এবং অবহেলিত নিপীড়িত মানুষদের জন্য বুক চিতিয়ে লড়াই নিয়ে ছিল তুখোড় রাজনীতিবিদ বিমান বসুর জীবন। তাঁর জীবনের সুর রচিত সাম্যবাদের গানে। ছোট থেকে নিজের গোটা জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন রাজনীতির নামে। যৌবন থেকে শুরু করে বার্ধক্যের দোরগোড়ায় পৌঁছেও বরাবর রাজনীতির প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান এবং বঙ্গ সিপিএমের প্রাক্তন সম্পাদক বিমান বসু (Biman Basu)। আজ অর্থাৎ রবিবার কেরলের (Kerala) কান্নুরে সিপিএম (CPM) পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে নিজের রাজনৈতিক জীবনের কার্যত সমাপ্তির পথে একধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি। বয়সের কারণে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ ছাড়লেন বিমান বসু।
সালটা ১৯৮৫। ৪৬ বছর বয়সে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ পেয়েছিলেন তিনি। তারপর ১৯৯৮ সালে পলিটব্যুরোর সদস্য হন তিনি। তবে এখন বিমান বসুর বয়স ৮৩ এর গণ্ডি স্পর্শ করেছে। তাই পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ ছাড়তে হল তাঁকে। তবে এখনও অব্দি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান এবং সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত সদস্যপদে রয়েছেন তিনি। কেরলের কান্নুরে সিপিএম পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে নিজের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বিমান বসু। তিনি মায়ের কথা স্মরণ করে বলেন, "শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত এই পার্টি করব। পার্টি ছাড়া আমার জীবনে কিছু নেই।"
পুরনো জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিমান বসু এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে মায়ের জন্যই কমিউনিস্ট পার্টিতে আসা হয়েছিল তাঁর। তিনি বলেছেন, "মাকে জন্মের সময় খুব কষ্ট দিয়েছিলাম। আসলে আমি যখন গর্ভে ছিলেন তখন পূর্ববঙ্গ থেকে মাকে নিয়ে বাবা কলকাতায় এসেছিলেন। মাঝপথে মায়ের রক্তক্ষরণ শুরু হলে কলকাতার নামী ডাক্তার নীলরতন সরকারের কাছে দৌড়ে আসা হয়। এরপর প্রসবের সময় আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মত আমার জন্ম হয়নি। আমার পা আগে বেরিয়ে এসেছিল। তাই মায়ের খুব কষ্ট হয়েছিল। আরেকবার এরকম ভাবেই মাকে কষ্ট দিয়ে ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। সেখান থেকে প্রথমে বেনিয়াপুকুর কৃষকসভার অফিসে এবং পরে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে পাকাপাকি থাকতে শুরু করি। আর তারপরই কমরেডরা আমার পরমাত্মীয় হয়ে ওঠে।"
রাজনৈতিক জীবনের শেষ অধ্যায়ে পৌঁছে বিমান বসু বলেছেন, "এতদিন আমি পার্টির সব কিছু জানতাম। আমাকে আলাদা ভাবে জানানোর কোনো প্রয়োজনই পড়তো না। এবার থেকেও পার্টি যা বলবে সেটাই আমি করবো। শেষ নিশ্বাস অব্দি এই পার্টির কাজ করব। পার্টি ছাড়া আমার জীবনে আর কিছু নেই।"