পায়ে পায়ে ৬০০ দিন পার, যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিনের নয়া মাইলফলক
গান, গল্প, আড্ডায় উদযাপন, তুলে ধরা হল কৃষক আন্দোলনের সাফল্য
গত বছর ২০ মার্চ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করলেন দেশজুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউন। মুহূর্তের মধ্যেই স্তব্ধ হল 'কালের রথের চাকা'। আর স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটে উঠে এল একের পর এক করুণ দৃশ্য। পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরতে গিয়ে মৃত্যু, আবার কখনও রাস্তায় ঘুমন্ত অবস্থায় পিষে দিল ট্রাক। দু'মুঠো অন্নের জন্য বুভুক্ষু নিরন্ন মানুষের হাহাকার। সরকার থেকে দেওয়া হল রিলিফ, মহিলাদের হাতে পৌঁছাল সামান্য নগদ অর্থ। কিন্তু সমস্যা মিটল কই? দিনে দিনে অসহায় মানুষের হাহাকার আর সরকারের নগ্ন চেহারাটা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করল। কিছু মানুষ ঘরে বসে থাকতে পারলেন না। বেরিয়ে এলেন। ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে লাগলেন শুকনো খাবার, চাল, ডাল। আবার কখনও-বা রান্না করা খাবার। কিন্তু কতদিন? আর তখনই মানুষের পাশে দাঁড়াতে তৈরি হল যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন। কয়েকজন উদ্যোগী মানুষের হাতে তিল তিল করে গড়ে উঠল এই শ্রমজীবী ক্যান্টিন। যাদবপুর ছাড়িয়ে গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়ল শাখা। আর যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন গতকালই নয় নয় করে পেরল ছ'শ দিনে।
যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন গতকালই পৌঁছাল ৬০০ দিনে। পায়ে পায়ে ৬০০ দিন অতিক্রান্ত। এমন দুর্মূল্যের বাজার যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন এখন গোটা বাংলার 'রোল মডেল'। ২০ টাকার অনুদানে রোজদিন মিলছে দুপুরের খাবার। কোন দিন মাছ ভাত, সব্জি, আবার কখনও মুরগির মাংস, সব্জি, ভাত। আর কোন বিশেষ দিনে বিশেষ মেনু তো আছেই। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজও দেশের বাইরে থেকেও সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে এই ক্যান্টিনে। আর যার বিনিময়ে এমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারেও মিলছে ২০ টাকার অনুদানে একবেলার খাবার।
বুধবারের সন্ধ্যায় যাদবপুরের নবনগরে ৬০০ দিনের উদযাপনে ছিল গান, গল্প ও আড্ডা। সঙ্গে কৃষক আন্দোলনের সাফল্যও তুলে ধরা হয়েছিল। আয়োজন করা হয়েছিল নানান সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস, সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ, পৃথা তা প্রমুখ নেতৃত্ব। ৬০০ তম দিনে তুলে ধরা হল এমন কঠিন যাত্রাপথের নানা চিত্র।
যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিনের অন্যতম উদ্যোক্তা সুদীপ সেনগুপ্ত তুলে ধরলেন কৃষক আন্দোলনের সাফল্য। আর জানালেন, "৬০০ দিন পার করাটা একটা ভালোলাগার মুহূর্ত। মানুষের সাহায্যেই এই দীর্ঘপথ যাত্রা সফল সম্ভব হয়েছে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে যেমন লড়াই চলছে, তেমন এই শ্রমজীবী ক্যান্টিনও চলবে।"