দুঃস্বপ্নে ভয় পাবেন না
আসলে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার ট্রেনিং দিচ্ছে মস্তিষ্ক
ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখার অভিজ্ঞতা কমবেশি সকলেরই আছে। দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠে মনে হয়, কেন এমন ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখলাম, না দেখাই তো ভাল ছিল! মনোবিদরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, দুঃস্বপ্ন সবসময় ক্ষতিকর নয়, বরং মাঝে মাঝে তা দেখা ভাল। কী বলছেন তাঁরা?
অনেকেই এখন দুঃস্বপ্নের কবলে
করোনা অতিমারি শুধু যে বহুজনের জীবন ও জীবিকা কেড়ে নিয়েছে তাই নয়, মানুষের মনের জগতেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। দেখা গেছে, যেসব দেশে অতিমারির প্রকোপ তীব্র হয়েছে, লকডাউনে দীর্ঘ সময় স্তব্ধ থেকেছে জীবন, সেখানে বিশেষ করে যাঁরা সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, অনেকেই দুঃস্বপ্নের শিকার হয়েছেন। চিনের উহান শহর, যেখানে প্রথম দেখা দিয়েছিল কোভিড, সেখানে ১১৪ জন ডাক্তার ও ৪১৪ জন নার্সকে নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে মনোসমীক্ষকরা দেখেছেন, তাঁদের এক-চতুর্থাংশ প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখেন। মনোবিদদের মতে, একটানা মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাঁদের যেতে হয়, তাঁদের অনেকেরই দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবণতা তৈরি হয়। যদিও নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখা অন্য কোনও রোগের লক্ষণও হতে পারে। তবে সাধারণ ভাবে দুঃস্বপ্ন আমাদের মানসিক ভাবে স্থিতিশীল হতে সাহায্য করে বলেই মত মনোবিদদের।
দুঃস্বপ্নে ক্ষতি নয় বরং লাভ আছে
ইউনিভার্সিটি অফ টুসলার ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট জোয়ান্নে ডেভিস স্বপ্ন, মানসিক রোগ ও মানসিক সুস্থিতি বজায় রাখতে স্বপ্নের ভূমিকা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি দেখিয়েছেন, আমরা যখন ঘুমাই, মস্তিষ্ক তখন আমাদের পুরনো স্মৃতি ঝেড়েঝুড়ে গুছিয়ে রাখার কাজ করে। ঘুমের একটা সময়কে বলে ‘আরইএম' পর্যায়। এই সময়টা ঘুমন্ত মানুষের চোখের মণি নড়াচড়া করতে থাকে। যে সব ঘটনার সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে থাকে, এই পর্যায়ে সেইসব ঘটনার স্মৃতি সঞ্চয় করে মস্তিষ্ক। সঞ্চিত এই স্মৃতি থেকে ছেঁটে ফেলা হয় বাড়তি আবেগ। জেগে ওঠার পর বাস্তব জীবনে আবার ওই ধরনের ঘটনার মোকাবিলা আমরা আগের চেয়ে ভালোভাবে করতে পারি। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন, বসের কাছ থেকে প্রচণ্ড ধমক খেয়েছেন আপনি। খুব মনোকষ্ট হয়েছে। রাতে দুঃস্বপ্ন হিসাবে এল সেই ঘটনা। খেয়াল করলে দেখবেন, এর পরে আবার কোনওদিন বসের ধমক শুনতে হলেও ততটা কষ্ট হচ্ছে না। আসল কলকাঠি নেড়েছে কিন্তু ওই দুঃস্বপ্ন। শিখিয়েছে, কেমন করে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় আবেগ। আসলে দুঃস্বপ্ন ঘুমের মধ্যে আমাদের ট্রেনিং দিয়ে রাখে, ভয় পাওয়ার পরিস্থিতি কেমন করে মোকাবিলা করতে হয়। যত বেশি সময় ধরে একজন দুঃস্বপ্ন দেখেন, বাস্তবে ওই ধরনের পরিস্থিতির সামনা-সামনি হলে তত কম ভয় পান তিনি। মনোবিদরা এই দাবিই করছেন।
কখনও কখনও চিকিৎসাও প্রয়োজন
কিন্তু কেউ যদি নিয়মিত দুঃস্বপ্নের কবলে পড়তে থাকেন, তাহলে মনোবিদের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেই চিকিৎসাতেও কাজে লাগানো হয় দুঃস্বপ্নের এই তত্ত্ব। রোগীদের বলা হয়, যে সব দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে, সেগুলি যেমন মনে পড়ে, কাগজে লিখতে। বলা হয়, ঘটনাগুলি কেমন হলে ভালো হত, সেটাও যেন তাঁরা লেখেন। কয়েকদিন নিয়মিত লেখার পর দেখা যায়, দুঃস্বপ্ন দেখার হার কমছে, কিংবা সেগুলির ভয়ঙ্করতা আগের মতো নেই। সুতরাং মাঝেসাঝে দুঃস্বপ্ন দেখলে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, বিজ্ঞান বলছে, দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্ক আমাদের মানসিক চাপ কাটানোর এক ধরনের ট্রেনিং দেয় যাতে ভবিষ্যতে আমরা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা সহজে করতে পারি। তাই এবার থেকে দুঃস্বপ্ন দেখলেও জেগে উঠুন হাসিমুখে।