শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের পুলিশের, বিপাকে বিরোধী দলনেতা
একদিকে সিআইডি, অন্যদিকে রাজ্য পুলিশ, দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে জর্জরিত শুভেন্দু অধিকারী
আবারও নতুন করে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, কেন্দ্রবিন্দুতে সেই নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। একদিন আগেই রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি আভাস দিয়েছিলেন, যে কোন মুহূর্তে গ্রেফতার হতে চলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এবারে সেই রাস্তা আরো প্রশস্ত করা হচ্ছে। একে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্ত চলছে। দেহরক্ষী খুনের অভিযোগ, ত্রিপল চুরির অভিযোগ, নন্দীগ্রামে ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ, এতকিছু নিয়ে যখন বিতরক এর মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে শুভেন্দু অধিকারী তার মধ্যে আবার নতুন করে বিতর্ক তার ঘাড়ে এসে চাপল। এই বিতর্কটি তিনি নিজেই ডেকে এনেছেন তাঁর বেফাঁস মন্তব্যের মাধ্যমে। কিছুদিন আগে শুভেন্দু অধিকারী নিজেই দাবি করেছেন তার কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের কল রেকর্ড আছে। তারপরেই প্রশ্ন উঠেছে, এই কল রেকর্ড তার কাছে কিভাবে রয়েছে? তিনি কি কারো ফোন ট্যাপ করছেন? নাকি শুভেন্দু অধিকারী নিজেই বিশেষ কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন? এই জল্পনা উস্কে দিয়ে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের পথ আরো প্রশস্ত করলেন শুভেন্দু।
শুভেন্দু অধিকারী এদিন বলেছিলেন, "আপনার হাতে যদি রাজ্য সরকার থাকে তাহলে আমার হাতেও কিন্তু কেন্দ্র সরকার রয়েছে।" এই মন্তব্যের পরে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা আরো বেড়েছে। একটি প্রকাশ্য জনসভায় গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, " আমি আইসি, ওসিদের কাজকর্ম এবং তাদের ভূমিকা বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। তখন পিসিমণি চটিমনি কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। আপনারা ভুলে যাবেন না আপনারা কিন্তু সেন্ট্রাল ক্যাডারের অফিসার। আপনাদের যদি কাশ্মীরের কোথাও বদলি করে দেওয়া হয় আপনাদের ভালো লাগবে? ভাইপোর অফিস থেকে যারা আপনাকে ফোন করে, আমার কাছে প্রত্যেকটা কল রেকর্ড এবং ফোন নম্বর রয়েছে। আপনাদের হাতে যদি রাজ্য সরকার থাকে তাহলে আমার কাছেও কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার আছে।" প্রকাশ্য জনসভায় শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যের পরেই রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইন এবং গোপনীয়তা আইন এর ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
একদিকে তার বিরুদ্ধে চলছে সিআইডি তদন্ত। তার মধ্যে আবার পুলিশের স্বতপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের হয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসামাত্রই একেবারে তোলপাড় হয়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতি। এফআইআর দায়ের হলে দ্রুত তদন্ত করে সেই ব্যক্তিকে হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া করে পুলিশ। সেক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে শুভেন্দু অধিকারী খুব শীঘ্রই পুলিশের জালে জড়িয়ে পড়তে পারেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ, তার সঙ্গে আবার পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা। সব মিলিয়ে বর্তমানে শুভেন্দু অধিকারী বেশ কিছুটা চাপ এর মধ্যে রয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ বলেছেন, "এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সোমবার তার করা মন্তব্যের উপর ভিত্তি করে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের করেছে সরকারি আধিকারিকদের ভয় দেখানো, তাদের অপমান করা এবং ফোনে আড়িপাতার অভিযোগে। তার বিরুদ্ধে তিনটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।"
যদিও এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, 'শুভেন্দু অধিকারী একজন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। রাজনৈতিক পদযাত্রায় গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। যদি পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন তাহলে মুকুল রায়কে কেন বাদ দিচ্ছেন? তিনিও তো বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবাদমাধ্যমে গিয়ে বলেছিলেন তার ফোন ট্যাপ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।' কিন্তু পুরনো ব্যাপার আলাদা। বর্তমানে পেগাসাস সফটওয়্যার ইস্যু নিয়ে একেবারে সরগরম রয়েছে জাতীয় রাজনীতি। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীকে রাজ্যসভায় বারংবার এই নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে। তার কাছে পেগাসাস সফটওয়্যার নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করা হচ্ছে প্রত্যেকদিন।
সংবাদসংস্থা দ্যা ওয়ার এর প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল একাধিক রাজনৈতিক নেতার সেলফোন ট্যাপ করা হয়েছে এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে। পরবর্তীকালে কিছু সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা যায় ইজরায়েলের এই স্পাই সফটওয়্যার অত্যন্ত দামী এবং সরকার ছাড়া সাধারণত এই সফটওয়্যার তেমন কেউ ব্যবহার করতে পারেন না। এই খবরটি সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মল্লিকার্জুন খারগে এই ঘটনায় স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তার পাশাপাশি, তিনি চেয়েছেন যেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে এই পেগাসাস সফটওয়্যার ইস্যু নিয়ে তদন্ত করা হয়। যাদের ফোন নাম্বার ট্যাপ করা হয়েছে বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ তাদের মধ্যে নাম রয়েছে রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোরের। এছাড়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর ব্যক্তিগত সচিবের নাম রয়েছে সেই তালিকায়। এই পরিস্থিতিতে আবার শুভেন্দু অধিকারী দাবি করে বসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ কল রেকর্ড রয়েছে তার কাছে এবং তার হাতে কেন্দ্রীয় সরকার রয়েছে। এই দুটি মন্তব্যকে একসাথে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে চাইছেন অনেকেই। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলা দায়ের হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। এখন এটাই দেখার পুলিশ কত তাড়াতাড়ি তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে।