ভোটের ফল পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা, বলি ১২, রিপোর্ট চাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
"সবাইকে বলব, শান্ত থাকতে। যদি কারও বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকে, তাহলে পুলিশকে সরকারি ভাবে জানাবেন।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজ্যজুড়ে ভোটের ফল পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা অব্যাহত। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৫ জন তৃণমূল কর্মী, ৫ জন বিজেপি কর্মী, ১ জন আইএসএফ কর্মী। আর এক জনের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। রাজ্যের বহু জায়গায় বাড়ি-দোকান ভাঙচুর, লুট, আগুন লাগানোর অভিযোগ এসেছে একে অন্যের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীর কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। উল্টোদিকে ভোটের ফল ঘোষণার পর রাজ্যজুড়ে হিংসার অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বিজেপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় রাজ্য পুলিশের ডিজি নীরজনয়ন পান্ডে এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার সোমেন মিত্রের সঙ্গে সন্ধ্যেবেলা বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে এই প্রসঙ্গে কথা হয় বলে জানা গেছে।
রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার বলি ফের শীতলকুচি। সোমবার সকালে নওদাবাস এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মানিক মৈত্র নামে বছর কুড়ির এক যুবক। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর দুই দলের গন্ডগোলের মাঝে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে বিকেলে দিনহাটার জামাদারবাস গ্রামে তৃণমূলের আক্রমণে এক বিজেপি কর্মী হারাধন রায়ের মৃত্যু হয়েছে। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পূর্ব বর্ধমানে নিহতদের মধ্যে চার জন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। এক জন বিজেপি কর্মীর মা। সোমবার রাতে কেতুগ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য শ্রীনিবাস ঘোষকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও তৃণমূলের অভিযোগ, রবিবার ফল বেরনোর পরে, রায়নার সমসপুর গ্রামে গণেশ মালিক নামে এক কর্মীকে টাঙ্গি দিয়ে কোপানো হয়। বিজেপির অভিযোগ, জামালপুরের নবগ্রামে এ দিন দুপুরে তাদের স্থানীয় নেতা আশিস ক্ষেত্রপালের বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায়। টাঙ্গির কোপে মৃত্যু হয় আশিসবাবুর মা কাকলি ক্ষেত্রপালের। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির হামলায় অস্ত্রের কোপে শাজাহান শা ও বিভাস বাগ নামে তাদের দু’জন কর্মীর মৃত্যু হয়। রাত পর্যন্ত আট জনকে ধরা হয়েছে। খোদ কলকাতায় কাঁকুড়গাছিতে অভিজিৎ সরকার নামে এক বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার সোনারপুরে হারান অধিকারী নামে এক বিজেপি সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের উলাগ্রামে এ দিন সকালে খুন হন হাসানুজ্জামান নামে এক আইএসএফ সমর্থক। অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর সামনেই তাঁর হাত কেটে দেওয়া হয়, পেটে বল্লম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে। অন্যদিকে দুপুরে হুগলির খানাকুলের নতিবপুরে তৃণমূলের নতিবপুর ২ অঞ্চলের কার্যকরী সভাপতি দেবু প্রামাণিককে পিটিয়ে খুনে অভিযুক্ত বিজেপি। নদিয়ার গাংনাপুরের বিবেকানন্দ পল্লিতে রবিবার রাতে খুন হন উত্তম ঘোষ নামে এক বিজেপি সমর্থক। অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। সবক্ষেত্রেই অভিযোগ খারিজ তৃণমূলের।
সোমবার কালিঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, "সবার কাছে আবেদন করব বাংলা শান্তিপ্রিয় জায়গা, সংস্কৃতি, সম্প্রীতিপ্রিয় জায়গা। নির্বাচনে হার-জিত হয়েছে। আবহাওয়া গরম হয়েছে কখনও, কখনও ঠান্ডা হয়েছে। বিজেপি অনেক অত্যাচার করেছে এটা আমরা জানি। কেন্দ্রীয় বাহিনী অনেক অত্যাচার করেছে জানি। তা সত্ত্বেও সবাইকে বলব, শান্ত থেকে যেন কেউ কোনও হিংসাত্মক ঘটনায় না জড়াই। এখন মানুষের সবচেয়ে বড় কাজ, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করা।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এত বিপুল সমর্থন নিয়ে জিতে আসার পরও এত হিংসা হবে কেন? পুলিশের সামনেই আক্রমণ হচ্ছে, বাড়ি-ঘর ভাঙা হচ্ছে, আগুন দেওয়া হচ্ছে। পুলিশকর্তারা মুখ বুজে আছেন। মুখ্যমন্ত্রী যদি দায়িত্ব না নেন, তা হলে আর কে নেবে?’’ মমতা বলেন, ‘‘সবাইকে বলব, শান্ত থাকতে। যদি কারও বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকে, তাহলে পুলিশকে সরকারি ভাবে জানাবেন। পুলিশকেও আমি বলব এলাকা শান্ত রাখতে। আইন নিজেদের তুলে নেবেন না।’’