তৃণমূল সরকারের জনমুখী প্রকল্পের অতিরিক্ত বিরোধিতা পরাজয়ের কারণ, মনে করছেন সিপিএম রাজ্য কমিটি
নীচুতলার কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা না করে আইএসএফের সঙ্গে জোটকেও পরাজয়ের কারণ মনে করছেন একাংশ, যদিও মানতে নারাজ শীর্ষ নেতৃত্ব
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই সিপিএমের (CPIM) ভরাডুবির কারণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। কখনও আইএসএফ (ISF) কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গে জোট কিংবা দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রতি আঙুল তুলেছেন একাংশ। এমনকী দলের অন্দরে এ নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভের আঁচ লেগেছিল। ড্যামেজ কন্ট্রোলে রীতিমতো আসরে নামতে হয়েছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের। আবার কখনও পরাজয়ের দায়ভার দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমন অবস্থায় ভোটের ফল ঘোষণার পর প্রথম ভার্চুয়াল রাজ্য কমিটির বৈঠকেও সেই কাদা ছোঁড়াছুড়ির সাক্ষী থাকল বাংলা।
ভোটের পর এই প্রথম রাজ্য কমিটির সভা হল। তাও কোভিড পরিস্থিতি মাথায় রেখে ভার্চুয়ালি। সেখানেও একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেল। অবশ্য ভোটের পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি রাজ্য সরকারের জনমুখী কর্মসূচির অতিরিক্ত বিরোধিতার কারণেই এই ফলাফল হয়েছে। মানুষ সিপিএমকে গ্রহণ করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করতে শোনা গেছে একাংশের মুখে।এমনকী নীচুতলার কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা না করে আইএসএফের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্তকেও দায়ী করেছেন একাংশ।
একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের অন্যতম কারণ মমতা সরকারের সাধারণ মানুষের জন্য জনমুখী প্রকল্প। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য নানা প্রকল্প মমতা সরকারের গদি রক্ষা করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সিপিএম প্রথম থেকেই বিভিন্ন প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছে। কিন্তু সাধারণ জনমানসে তার কোন সুদূরপ্রসারী প্রভাব তৈরি করতে পারেনি। বরং রাজ্য সিপিএমের প্রতি মানুষের বিশ্বাস আরও তলানিতে পৌঁছেছে। এদিকে শনিবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে কার্যত সেই দায় স্বীকার করে নেওয়া হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক একাংশ। তবে আইএসএফের সঙ্গে জোট ভাঙতে এখনোই উদ্যোগী নয় সিপিএম। সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন এই জোটের প্রয়োজন ছিল। এখনই ভেঙে ফেলার কোন কারণ দেখছেন না শীর্ষ নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে সিপিএমের ভরাডুবিতে তোপ দেখেছিলেন তন্ময় ভট্টাচার্য, কান্তি গাঙ্গুলির মতো বর্ষীয়ান নেতারা। তাঁদের স্পষ্ট দাবি ছিল শুধু মার্কস, স্তালিন কপচালে হবে না। মানুষের কথা শুনতে হবে। যদিও সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব সে দাবি মানতে নারাজ। বরং প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর গুলোকে দমাতে ব্যবস্থা নিতে চলেছে বলেও সূত্রের দাবি। ইতিমধ্যেই তন্ময় ভট্টাচার্যকে ৩ মাসের জন্য মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনের পর প্রথম রাজ্য সিপিএম কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক কার্যত যে মাছের বাজারে পরিণত হল, তা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক একাংশ।