উত্তরবঙ্গে রাজবংশী এবং দক্ষিণবঙ্গে মতুয়ারাই বিজেপির 'সম্মানজনক' আসন ধরে রাখল
মতুয়া ও রাজবংশী ভোট-ব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে পারেনি তৃণমূল
উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণে বিজেপির 'মান' রক্ষা করল রাজবংশী ও মতুয়া সম্প্রদায়, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। বিজেপির 'সম্মানজনক' আসন বজায় রাখার ক্ষেত্রে এরাই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে। বিজেপির ভোটবাক্সে এদের সমর্থন না থাকলে বিজেপির প্রধান বিরোধী দলের আসনটুকুও পেতে হিমশিম খেতে হত।
দক্ষিণবঙ্গের কথা যদি ধরা যায়, এই নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট বিজেপির ঝুলিতে যাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গে যে ক'টি আসন বিজেপি দখল করেছে, তাতে বড় ভূমিকা পালন করেছে মতুয়া সম্প্রদায়। দক্ষিণবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদীয়ার যে ক'টা আসন বিজেপি পেয়েছে তার বেশিরভাগ মতুয়া অধ্যুষিত এলাকা। উত্তর ২৪ পরগনার একমাত্র হাবড়া আসনটি তৃণমূল কংগ্রেস ধরে রাখতে পারলেও একটা বড় অংশ বিজেপির দখলে এসেছে। এনআরসি ইস্যু বড় প্রভাব ফেলেছে বিজেপির ভোট-ব্যাঙ্কে। বনগাঁ উত্তর ও দক্ষিণ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণ, কৃষ্ণনগর আসনে মতুয়া ভোটের প্রভাব স্পষ্ট। তবে মতুয়া অধ্যুষিত তেহট্ট আবার তৃণমূলের দখলে। সবমিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলা উত্তর ২৪ পরগণা ও নদীয়ার বিজেপির জেতা আসনের একটা বড় অংশে মতুয়া ভোটের প্রভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মতুয়া স্তুতি বড় ভূমিকা পালন করেছে।
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। তবে একুশের বিধানসভায় তৃণমূল লোকসভার তুলনায় ভালো ফল করলেও রাজবংশী, কামতাপুরি অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এমনকি চতুর্থ দফায় সংবাদ শিরোনামে চলে আসা শীতলকুচিও বিজেপির দখলে রয়েছে। তাছাড়া কোচবিহারের দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা, তুফানগঞ্জ, মেখলিগঞ্জ, কোচবিহার উত্তর ও দক্ষিণ, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে বেশ কিছু আসন জিততে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে রাজবংশীর একটা বড় অংশ তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। রাজবংশীদের জন্য তৃণমূল সরকার কাজ করলেও তাঁদের মনে জায়গা করে নিতে পারেনি বলে মনে করছেন একাংশ। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজবংশী এবং মতুয়া ভোট বিজেপি যদি নিজেদের ঘরে তুলতে না পারত, তাহলে বিজেপির আসন সংখ্যা ৫০-এর ঘরে আটকে যেত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক দল।