কেবল চাকরি 'বিক্রি' করেই কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এমন টাকার পাহাড়? কী বলছে ইডি

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 18/08/2022   শেষ আপডেট: 18/08/2022 10:24 a.m.
-

বারবার জেরায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, উদ্ধার হওয়া টাকার পাহাড় তার নয় বরং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের

বারংবার জেরার সময় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee) বলছেন, উদ্ধার হওয়া এইসব টাকা তার নয় বরং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) টাকা এগুলি। বুধবার প্রেসিডেন্সি ছেলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট আধিকারিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, টাকা তার নয় বরং অর্পিতার বাড়ি এবং তিনি বলতে পারবেন। বেলা বারোটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত তাকে ইডি অফিসাররা বারংবার জেরা করেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। ইডি দাবি করছে, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তদন্তে অসহযোগিতা করছেন। অন্যদিকে, অফিসাররা যাওয়ার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা তার সঙ্গে দেখা করেন। নিজের অ্যারেস্ট মেমোয় মুখ্যমন্ত্রীর নাম থাকার বিষয়টি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি এই নাম দিতে চাননি। বরং এই নাম আগে থেকে লেখা ছিল বলে তিনি সই করেননি। বস্তুত, গ্রেফতারের পর দায় অস্বীকার করার জন্য এতদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে সমস্ত বিষয় খোলসা করেননি, সেই সমস্ত বিষয়ে এবারে উঠে আসতে শুরু করেছে। আর সেই সমস্ত চমকপ্রদ বিষয়ে শোনার পরেই, অবাক হয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা।

জানা যাচ্ছে, ইডি মূলত টাকার উৎস, কিছু যৌথ সম্পত্তি এবং মেয়ে জামাইয়ের তহবিল নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করছে। এছাড়াও বারংবার উঠে আসছে একটি বিশেষ ট্রাস্টের প্রসঙ্গ। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কখনোই এই সমস্ত প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে চাইছেন না। কখনো বলছেন, জানি না, আবার কখনো বলছেন আগেই তো বলেছি। বয়ানে অসংগতির কথা বারবার বলছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডি। তাদের সন্দেহ, শুধুমাত্র চাকরি বিক্রি করে নয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই বিপুল পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করেছেন আরো বেশ কয়েকটি মাধ্যমে। এখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দু তিনজন ঘনিষ্ঠ জড়িত রয়েছেন বলেও সূত্রের খবর। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের জন্য এই নোটগুলি মজুদ করা হয়নি। সমস্ত নোট একেবারে নয়া।

এসএসসি নিয়োগ কান্ডের টাকা যদি এসেও থাকে, তাহলে আগেই সম্পত্তি কিনতে ব্যবহার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, পার্থবাবু এই দিন বারবার বলছেন, 'যার বাড়ি সে জানে।' এর মাধ্যমে কি বোঝাতে চাইছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়? যৌথ সম্পত্তি এবং ট্রাস্টের তহবিল নিয়ে প্রশ্ন করার সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। ইডি অফিসাররা বয়ানের অসঙ্গতি ধরতে একাধিক বার একই ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন। একবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিরক্ত হয়ে গিয়ে বলেন, 'এক কথা কতবার বলবো?'। সেই সময় একজন আধিকারিক বলেন, 'অন্য অভিযুক্তের সঙ্গে আপনার কথা তো মিলছে না।' সেই কথা শুনে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিছুটা হলেও থমকে যান।

ইডি সূত্রে খবর, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে জেরা করে আধিকারিকরা একাধিক তথ্য পেয়েছেন। অপা বাড়ির নামের প্রসঙ্গ তুলতেই, পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'অর্পিতাকে আপনারা বেশি উত্যক্ত করবেন না।' পাল্টা ইডি বলে, 'আপনি তো বলছেন টাকা অর্পিতা মুখোপাধ্যায়র। ফলে আমাকে একটু প্রশ্ন তো করতেই হবে।' এই কথার উত্তরে পার্থ বলেন, 'আমাকে আর একটু ভাবার সময় দিন।' এরপরে ট্রাস্ট আর মেয়ে জামাইকে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। মোটামুটি এখানেই এদের জেরা পর্ব শেষ হয়। জানা যাচ্ছে, আজকে পার্থ এবং অর্পিতাকে আদালতে তোলা হবে। সন্ধ্যেবেলা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় আদালতের রণ কৌশল ঠিক করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাই এবারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন গ্রহণ করা হবে কিনা, সেই নিয়েই আদালতে হবে কথা।