সৎ মায়ের বঞ্চনা! ঠাঁই আস্তাকুড়, শেষমেশ গরিবের 'মসিহা' বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 25/08/2022   শেষ আপডেট: 25/08/2022 10:45 a.m.
twitter.com/paulagnimitra1

এদিন বর্ষিয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে পুরো ঘটনা বিবৃত করে শোনালেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

না কোন পুরনো বাংলা সিনেমার গল্প বলা হচ্ছে না, বরং এটা একেবারে প্রকৃত বাস্তব। এক সন্তানের প্রতি তার সৎ মায়ের বঞ্চনার ঘটনা যে এই মাথায় পৌঁছে দিতে পারে তা কোনদিন ভাবতে পারেনি রাজ্য প্রশাসনের কেউ। তবে যে দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে পালন করতে হতো, সেই দায়িত্ব এবার পালন করে দেখালো আদালত। সংবিধানে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর সমস্যার সমাধান করা রাজ্যের দায়িত্ব। তবে এবারে সেই দায়িত্ব নিজের কাছে তুলে নিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সাঁওতাল পরিবারের ছেলের পড়াশোনা থেকে বসবাসের সমস্ত বন্দোবস্ত করে দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই। পাশাপাশি সৎ মায়ের বিরুদ্ধে উঠলো বঞ্চনার অভিযোগ। কেন গত চার মাস ধরে সৎ মা পিঙ্কি কোন টাকা দেননি, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই সৎ মায়ের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

ঘটনাক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। সেই বছর রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন সাঁওতাল পরিবারের এক ছেলে বামাপদর (নাম পরিবর্তিত) মা রমা। তারপর হঠাৎ রহস্যজনকভাবেই মারা গিয়েছিলেন বাবা বংশী টিঙ্গুয়া। মা মারা যাবার পর পেশায় স্কুলের অশিক্ষক কর্মী হিসেবে কর্মরত বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। পরে বাবা মারা যাবার পর সেই চাকরি গ্রহণ করেন তার সৎ মা। শর্ত ছিল, চাকরি পাওয়ার পর পরিবারের দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু কিছুদিন দেখার পর থেকেই সৎ মায়ের বঞ্চনার শিকার হতে শুরু করেন বামাপদ। একই সঙ্গে অসহায় হয়ে পড়েন তার বৃদ্ধ ঠাকুরদাদা। অবশেষে দাদু এবং নাতি গিয়ে ওঠেন গাছ তলায়। ত্রিপল টাঙিয়ে দাদু-নাতির সংসার। কিন্তু সংসার চালানো বৃদ্ধ দয়ানাথের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

এই কারণে আদালতে গিয়ে খোরপোষের দাবি করে মামলা দায়ের করেন ওই বৃদ্ধ। গত বছর ডিসেম্বর মাসে ওই সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চান নাতি এবং দাদু এই মুহূর্তে কোথায় থাকেন? তাঁদের দুজনের বাসস্থানের ছবি দেখে তিনি একেবারে স্তব্ধ হয়ে যান। পূর্ব মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত কোন একটি গ্রামে বটগাছের তলায় তারা কোনক্রমে ত্রিপল খাটিয়ে রয়েছেন। সাঁওতাল সম্প্রদায় ভুক্ত হওয়ার কারণে বিশেষ সুবিধা তাঁরা পান না বলে অভিযোগ। এরপরেই জেলা শাসককে ডেকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে প্রকল্প অনুযায়ী বাড়ি বানিয়ে দিতে। শুধু তাই নয়, সেই সময় ওই ছেলেটিকে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সম্প্রতি ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে ওই ছেলেটি। এদিন ভরা এজলাসে এই শুনে অত্যন্ত আপ্লুত বিচারপতি। বামাপদর উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, "ভালো করে পড়াশোনা কর আমরা সকলে তোমার পাশে আছি।" তার সঙ্গেই আদালত জানিয়েছে সাবালক না হওয়া পর্যন্ত এই মামলা আদালতের নজরদারিতে থাকবে।