একবার রুদ্রদা আমার যৌনাঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ হাওড়ার তরুণীর
প্রকৃত পুরুষ সে, যে নারীত্বকে সম্মান করে, বললেন নীলাঞ্জনা
ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেবার পরেও বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না রুদ্রনীল ঘোষের। প্রথমে ছিলেন বামপন্থী। তারপর হলেন তৃণমূল পন্থী। তারপর আবার সরাসরি যোগ দিলেন গেরুয়া দলে। যোগ দেওয়া মাত্রই টিকিট পেয়ে গেলেন ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। সম্পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে প্রচার করলেন। কিন্তু তাঁর প্রতিপক্ষ একজন অত্যন্ত হেভিওয়েট নেতা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সবথেকে বড় নেতাদের মধ্যে একজন শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়। এত বড় একজন নেতার কাছে মোটামুটি ২৯,০০০ এর বেশি ভোটে পরাজিত হয়ে গিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। এমনিতেই তাঁকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে মিমের ছড়াছড়ি। একাধিক তারকা তাঁকে নিয়ে একাধিক মন্তব্য করে চলেছেন। আর এবারে রুদ্রনীল ঘোষের বিরুদ্ধে উঠল মহিলাকে 'কু-প্রস্তাব' দেওয়ার অভিযোগ।
হাওড়ার বাসিন্দা নীলাঞ্জনা পান্ডে নামক এক মহিলা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেন। নীলাঞ্জনা লিখলেন, "আমি যদি সত্যি কথা বলি, তাহলে বলব, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি রুদ্রনীল ঘোষের হারে। কয়েক বছর আগে, রুদ্রনীলের কুপ্রস্তাব না মানায় তার প্রোডাকশন হাউস থেকে আমাকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। আমার প্রাপ্য টাকাও দেওয়া হয়নি। সেদিন ইন্ডাস্ট্রিতে নিউকামার ছিলাম। আজ প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন সেদিন বিচার চাইনি? আসলে তখন ভয় পাইনি, কিন্তু বিচারের জন্য একজন নিউকামারকে কিভাবে এগোতে হবে জানতাম না। ঘৃণাবশতঃ রুদ্র-র নোংরা মেসেজ মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। ফলে প্রমাণ ছিল না। আজও বিশ্বাস করি, ভগবানের মারে আওয়াজ হয় না। তাঁর বিচার খুব সুক্ষ্ম বিচার। সেদিন হয়তো রুদ্রনীল প্রভাব খাটিয়ে আদালতে আমাকে পরাজিত করত। কিন্তু আজ জনগণ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। আজ রুদ্রনীল ঘোষ পরাজিত। রুদ্রনীলের পতনের সবে শুরু হয়েছে। রুদ্রনীল যদি এই পোস্ট দেখে বা তাকে যদি আমার পরিচিত কেউ এই পোস্ট সম্পর্কে বলে, তাহলে আমিও শুনতে চাই রুদ্রনীল কিভাবে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সাফাই দেবে। এই পোস্টে আজ আমি কাউকে ট্যাগ করব না। শুধু জনগণ ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানাব। তাঁরা ন্যায়বিচার করেছেন। রুদ্রনীল ঘোষ, তুমি হেরেছ বলে তোমার শহর হাওড়া গর্বিত, আনন্দিত। তোমার শহর হাওড়াও তোমাকে তার সন্তান বলতে ঘৃণা বোধ করে। আরও একটি কথা, একটি ছেলে কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করে, কুপ্রস্তাব দিয়ে পুরুষ হয় না। তাকে নপুংসক বলা হয়। প্রকৃত পুরুষ সে, যে নারীত্বকে সম্মান প্রদর্শন করে। রুদ্রনীল, এই পোস্টের কথা জানার পর তুমি সাইবার ক্রাইম সেলে যাও, আমার বিরুদ্ধে মামলা করো, আমি সেসবের পরোয়া করি না। কিন্তু মনে রেখো, এই তোমার পতনের শুরু।"
নীলাঞ্জনা আরো দাবি করেন, রুদ্রনীল মেসেজ করে বারবার তাঁকে তার বাড়িতে যেতে বলতেন। নীলাঞ্জনার অভিযোগ, "একবার রুদ্রদা আমাকে আমার যৌনাঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। সেদিনও কিছু বলতে পারিনি।" নীলাঞ্জনা বলেছেন, "আমার প্রাপ্য টাকাও দেওয়া হয়নি। অনেকে হয়তো বলবে এই পোস্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু তা কিন্তু নয়। আমি তখন বুঝতে পারিনি একজন নতুন মুখ কিভাবে বিচারের জন্য এগোবে।"
নীলাঞ্জনার অভিযোগের পাল্টা রুদ্রনীল বলেন, "আমাকে আমার অনেকদিনের বন্ধু অভিনেত্রী জিনা তরফদার মঙ্গলবার রাতে সেই পোস্ট পাঠিয়েছিলেন। পড়ার পরে আমি প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাই আদৌ এরকম কোন মহিলা কাজ করতেন কিনা? অথবা কারণ কোন টাকা বাকি রয়ে গেছে কিনা? কিন্তু কোন বিষয় নিয়ে আমি কোন উত্তর পাইনি। এই ঘটনা সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যা হচ্ছে তার সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে আছে। এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছি কেউ কখনো আমাকে বা আমার প্রযোজনা সংস্থার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেনি। আজকে কেন? এখানেই সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেল। এখানে একটা রাজনৈতিক অভিসন্ধি আছে। আর মেসেজ মুছে দিয়েছেন কারণ আগে থেকে বলে রাখলেন যেন সেই প্রশ্নটা করার জায়গা না থাকে।"
রুদ্রনীলের এরকম মন্তব্যের পর নীলাঞ্জনা আবার তার ফেসবুক ওয়ালে পাল্টা একটি পোস্ট লিখলেন। এই পোস্টটি নীলাঞ্জনা লিখলেন, "রুদ্রনীল এখন আমার কথায় রাজনৈতিক গন্ধ পাচ্ছে, তা এবার বলে দিক, কোন রাজনৈতিক দল আমাকে দিয়ে এই কাজ করাচ্ছে? গন্ধ যখন পাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই নাম জানে। ২০১২ সালে প্রযোজনা সংস্থাটি রুদ্রনীল ঘোষের একার ছিল না, এই প্রযোজনার সমান অংশীদার ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। রুদ্রনীল-পরমব্রতর প্রযোজনা সংস্থায় সেই সময় জিনা তরফদার নামে কেউ কাজ করতেন না। প্রকৃতপক্ষে 'ওয়ার্কশপ' নামে ওই সংস্থায় আমি ছিলাম একমাত্র মহিলাকর্মী। এই কারণে পরমব্রত নিজে যেদিন অফিসে আসতেন না, সেদিন তিনি আমাকেও আসতে বারণ করতেন। হয়তো আমার নিরাপত্তা নিয়ে তিনিও চিন্তিত ছিলেন। পরমব্রতর কাছেই আমার চিত্রনাট্য লেখা ও পরিচালনা শেখার হাতেখড়ি। তিনি আমার 'মেন্টর' ছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না, রুদ্রনীল তাঁকে জড়িয়ে আমাকে রীতিমত নোংরা কথা বলেছিল। 'ওয়ার্কশপ'-এ সেই সময় কাজ করতেন অরুণাভ খাসনবীশ। 'ওয়ার্কশপ' ছেড়ে আসার পর অনেকের মুখে জানতে পেরেছিলাম আর্থিক তছরুপের অভিযোগে অরুণাভকে সংস্থা থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। রুদ্রনীল এরপর হয়তো বলবে পরমব্রতকে চেনে না, অরুণাভ খাসনবীশকে চেনে না। প্রকৃতপক্ষে, রুদ্রনীল কি নিজেকে চেনে? আগে ও নিজেকে সেই প্রশ্ন করুক। সবুজ, গেরুয়া, সংযুক্ত মোর্চা সমস্ত শিবিরেই মহিলা কর্মী রয়েছেন। এটি কোনো রাজনৈতিক পোস্ট নয়। মহিলাদের জন্য একজন মহিলা হয়ে আমি এই পোস্ট করছি। তাতে কোনো মহিলার রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে আমার কিছু যায়-আসে না। রুদ্রনীলেরও রাজনৈতিক মতাদর্শ তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু রুদ্রনীলের মনে হয় নিজের মেমারিতে একটু জোর দেওয়া উচিত। অথবা এমনও হতে পারে রুদ্রনীল হয়তো ধীরে ধীরে স্মৃতিভ্রমের মতো অসুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।"